Tuesday, September 16, 2025
Google search engine
Homeআন্তর্জাতিকপৃথিবীর আশ্চর্যময় ১০টি জাদুঘর

পৃথিবীর আশ্চর্যময় ১০টি জাদুঘর

জাদুঘর শুনলেই আমাদের মনে হয়—রাজা–রানীর মুকুট, পুরোনো তলোয়ার, অথবা ইতিহাসের নিদর্শন। কিন্তু পৃথিবীতে আছে এমন সব জাদুঘর, যেগুলো এতটা অদ্ভুত আর চমকপ্রদ যে প্রথমে বিশ্বাসই করতে মন চাইবে না। চলুন এবার ঘুরে আসি সেই দশটি আশ্চর্যময় জাদুঘরে, গল্পের মতো এক ভ্রমণে।

১. ইন্টারন্যাশনাল স্পাই মিউজিয়াম – গুপ্তচরদের গোপন দুনিয়া

ওয়াশিংটন ডিসির এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত জাদুঘর। সেখানে গেলে  মনে হবে যেন জেমস বন্ডের ছবির সেটে ঢুকে পড়েছেন। এখানে রাখা আছে সত্যিকারের ‘স্পাই গ্যাজেটঃ’—লিপস্টিক পিস্তল, জুতার ভেতরে লুকানো ক্যামেরা, এমনকি গুপ্তচরের কোড ভাঙার বা জাল চিনার যন্ত্র। দর্শনার্থীরা চাইলে নিজেরাও ছোটখাটো “গোপন মিশন” খেলে দেখতে পারেন।

২. মেগুরো প্যারাসাইটোলজিক্যাল মিউজিয়াম – শরীরের ভৌতিক ভ্রমণ

টোকিওর এক শান্ত পাড়ায় রয়েছে পৃথিবীর একমাত্র পরজীবী–নির্ভর জাদুঘর। দেয়ালের কাঁচের ভেতর সারি সারি টেপওয়ার্ম, হুকওয়ার্ম, ফিতা কৃমি। সবচেয়ে বড় চমক—২৯ ফুট লম্বা এক টেপওয়ার্ম! গা শিরশির করে উঠবে যা দেখামাত্রই। যারা জীববিজ্ঞানে কৌতূহলী, তাদের জন্য জায়গাটা ভয়ের সাথে সাথে বিস্ময়েরও।

৩. দ্যা ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ফিউন্যার‌হিস্ট্রি – মৃত্যু উৎসবের আর্কাইভ

হিউস্টন, টেক্সাসে এই জাদুঘরে ঢুকলেই মৃত্যু আর শেষকৃত্যের এক অদ্ভুত জগৎ। এখানে রাখা আছে পুরোনো যুগের জানাজার গাড়ি, ঘানার রঙিন কফিন, এমনকি পোপ জন পল–এর ব্যবহৃত পোপমোবাইল। মনে হবে মৃত্যু এখানে শোকের নয়, বরং এক বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির রঙিন আখ্যান।

৪. মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপস – ভাঙা প্রেমের স্মৃতিঘর

ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগ্রেবে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম অদ্ভুত জাদুঘর। এখানে রাখা হয় ভাঙা সম্পর্কের স্মৃতিচিহ্ন—একটি পুরনো চিঠি, বিয়ের পোশাক, এমনকি ছোট্ট শিশি ভর্তি অশ্রু। প্রতিটি জিনিসের পাশে থাকে মালিকের লেখা গল্প। ভেতরে ঢুকলে মনে হবে—এ যেন হাজারো অজানা প্রেমকাহিনীর কান্না–হাসির আর্কাইভ।

৫. ইউএফও মিউজিয়াম – ভিনগ্রহীদের গল্প

নিউ মেক্সিকোর রোজওয়েল শহর জুড়ে আজও ঘোরে এক রহস্যময় গুজব—এখানে নাকি কখনও ইউএফও অবতরণ করেছিল! সেই ইতিহাস নিয়েই তৈরি হয়েছে ইউএফও মিউজিয়াম। ভেতরে ঢুকলে পাওয়া যাবে  নানা ছবি, ভিডিও, প্রত্যক্ষদর্শীর নথি, এমনকি এরিয়া ৫১–এর গোপন তথ্যের প্রদর্শনী। কেউ বিশ্বাস করবেন, কেউ করবেন না—কিন্তু কৌতূহল ধরে রাখবে অবশ্যই।

৬. প্লাস্টিনেরিয়াম – সংরক্ষিত দেহের শিল্পশালা

জার্মানির গুবেনে দাঁড়িয়ে আছে এই জাদুঘর। এখানে রাখা হয় মানুষের শরীর ও প্রাণীর অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ, যা ‘প্লাস্টিনেরিয়াম’ নামকবিশেষ এক কৌশলে সংরক্ষিত। চামড়া ছেঁড়া অবস্থায় দাঁড়ানো মানুষ, উন্মুক্ত হৃদয়, কিংবা জিরাফের দেহের কেটে রাখা অংশ—দেখলে গা শিউরে উঠবে। তবে একইসাথে মানবদেহের বিজ্ঞানও বোঝা যায় এ জায়গায়।

৭. আন্ডারওয়াটার মিউজিয়াম অব আর্ট – সমুদ্রের নিচে ভাস্কর্য

মেক্সিকোর ক্যানকুনের নীল সমুদ্রে ডুব দিলে দেখা মেলে এক জাদুঘরের। প্রায় ৫০০ ভাস্কর্য বসানো হয়েছে সমুদ্রতলে, এমন উপাদানে তৈরি যা প্রবালের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। ফলে এই শিল্পকর্মগুলো সময়ের সাথে সাথে হয়ে ওঠে জীবন্ত! ডাইভিং করে দর্শনার্থীরা দেখতে পান শিল্প আর প্রকৃতির এক অভূতপূর্ব মিলন।

৮. মিউসো দে লাস মোমিয়াস দে গুয়ানাজুয়াতো – প্রাকৃতিক মমির শহর

১৮৬০ এর দশকে ছোট্ট মেক্সিকান শহর গুয়ানাজুয়াতোতে একসময় এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল। তখনকার উচ্চ প্রশাসন শহরটিতে তাদের প্রিয়জনকে কবর দেওয়ার জন্য কর কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যখন অসহায় পরিবারগুলি করের অর্থ দিতে ব্যর্থ হয়েছিল, তাদের পরিবার প্রিয়জনের মৃতদেহগুলো পড়েছিল কোনো সৎকার ছাড়া। পরবর্তী শতাব্দীতে দেহগুলি যখন উদ্ধার করা হয়, দেহগুলো ততোদিনে প্রাকৃতিকভাবে মমিতে পরিণত হয়েছিল। আর এই মমিগুলির একটি সংগ্রহশালাতে জায়গা হয়, যার নাম হয় মিউসো দ্য লাস মমিয়াস দ্য গুয়ানাজুয়াতো।

৯. ইন্টারন্যাশনাল ক্রিপ্টোজুলজি মিউজিয়াম – অজানা প্রাণীর সন্ধানে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ বড় শহরগুলিতে সাধারণত চিড়িয়াখানা রয়েছে, কিন্তু পোর্টল্যান্ডের মেইন বিশ্বের একমাত্র স্থান যেখানে একটি ক্রিপ্টোজুলজি জাদুঘর রয়েছে।এখন প্রশ্ন হলো – ক্রিপ্টোজুলজি কী? এটি এমন এক বিষয় যা ডাইনোসর ছাড়াও লচ নেস দৈত্য (অতিকায় বিশালদেহী), বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের অস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করে।  আমরা জানি ডাইনোসর বিলুপ্ত। কিন্তু লচ নেস দানব, ইয়েতি, বিগফুট—ইত্যাদি রহস্যময় প্রাণীর পায়ের ছাপ, চুলের নমুনা, এমনকি প্রতিলিপি মডেল রাখা আছে এই জাদুঘরে । প্রতিষ্ঠাতা লরেন কোলম্যানের তার এই ক্রিপটিভ সংগ্রহে নানা প্রাণির পায়ের ছাপ এবং চুলের নমুনার পাশাপাশি বিজ্ঞানের দ্বারা স্বীকৃত নয় এমন বিখ্যাত এবং অস্পষ্ট প্রাণীগুলির নমুনা এবং প্রতিলিপিগুলি সংগ্রহ করে রেখেছেন।

১০. মিউজিয়াম অব মিনিয়েচার বুকস – ক্ষুদ্র বইয়ের রাজ্য

আজারবাইজানের বাকু শহরে আছে পৃথিবীর একমাত্র ক্ষুদ্র বইয়ের জাদুঘর। এখানে রাখা আছে ৫,৬০০–এরও বেশি ছোট ছোট বই। কিছু বই এতটাই ক্ষুদ্র যে পড়তে হলে ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দরকার। এর মধ্যে আছে ১৭শ শতকের কোরআনের এক ক্ষুদ্র সংস্করণও। বইপ্রেমীদের জন্য একেবারে স্বর্গরাজ্য।

উপসংহার

জাদুঘর মানেই শুধু ইতিহাস নয়। পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে অদ্ভুত সব সংগ্রহশালা, যেগুলো মানুষকে বিস্মিত করে, চিন্তার খোরাক জোগায় আর কখনও কখনও গা শিউরে তোলে। গুপ্তচরের গ্যাজেট থেকে শুরু করে পানির নিচের ভাস্কর্য কিংবা ভাঙা প্রেমের স্মৃতিচিহ্ন—এসব জাদুঘর আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানবসভ্যতার ইতিহাস শুধু অতীত নয়, বরং অদ্ভুত সব অভিজ্ঞতার সংরক্ষণও।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular