Monday, November 3, 2025
Google search engine
Homeইতিহাসপৃথিবীর প্রাচীন মানব সভ্যতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (পর্ব–১)

পৃথিবীর প্রাচীন মানব সভ্যতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (পর্ব–১)

মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর একটি হলো মানব সভ্যতার উদ্ভব। সভ্যতা শুধু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতির মাধ্যমই নয়, বরং মানবজাতিকে দিয়েছে সুসংগঠিত জীবনযাত্রা, উন্নত প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

মানবজাতির বিবর্তনের ইতিহাসে দেখা যায়, প্রায় ১০ লাখ বছর আগে জাভা মানব ও পিকিং মানব পৃথিবীতে বসবাস করত। ধীরে ধীরে হোমো সেপিয়েন্স উদ্ভব হয় এবং তাদের হাত ধরেই আধুনিক মানব সভ্যতার সূচনা ঘটে।

সভ্যতা বলতে বোঝানো হয়, মানুষ যখন অসংগঠিত ও বর্বর জীবনযাপন থেকে বের হয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উন্নত জীবনধারার পথ তৈরি করে, তখন তাকে সভ্যতা বলা হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, পৃথিবীতে প্রাচীনতম সভ্যতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ১৩টি। আজকের আলোচনায় থাকছে এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতার সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

মিশরীয় সভ্যতা

মিশরীয় সভ্যতা নীল নদের তীরে গড়ে ওঠে। ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস মিশরকে বলেছেন “নীল নদের দান”। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ থেকে ৩১০০ সালের মধ্যে প্রাচীন মিশরের রাজবংশ-পূর্ব যুগ বিস্তৃত ছিল। ছোট ছোট গ্রাম থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বৃহৎ নগর সভ্যতায় রূপ নেয় মিশর।

প্রাচীন মিশরীয়দের প্রধান দেবতা ছিলেন সূর্য দেবতা আমন। পরবর্তীতে ফারাও ‘আখেনাতেন’ একেশ্বরবাদ চালু করেন এবং সূর্য দেবতার নাম পরিবর্তন করে আতেন ঘোষণা করেন। মিশরীয়রা মৃত্যুর পর শরীর সংরক্ষণের জন্য মমি প্রথা চালু করেছিল।

মিশরের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হলো পিরামিড ও বিশাল মূর্তি। শিল্পকলা, ভাস্কর্য এবং স্থাপত্যশৈলীতে মিশরীয়রা অনন্য ছিল।

মেসোপটেমীয় সভ্যতা

বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা হিসেবে মেসোপটেমীয় সভ্যতাকে ধরা হয়। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী ভূমিতে (বর্তমান ইরাক) এটি গড়ে ওঠে। মেসোপটেমিয়া শব্দের অর্থ “দুই নদীর মধ্যবর্তী দেশ”।

এই অঞ্চলে একাধিক সভ্যতার বিকাশ ঘটে, যেমন – সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয়, অ্যাসিরীয়, আক্কাদীয় ও ক্যালডীয়। কৃষি, সেচ ব্যবস্থা, পানি সংরক্ষণ ও পশুপালন ছিল তাদের জীবিকার মূল ভিত্তি। খেজুর গাছকে তারা জীবনদায়ী বৃক্ষ মনে করত, কারণ খেজুর থেকে খাদ্য, মধু ও পানীয় তৈরি হতো।

সুমেরীয় সভ্যতা

সুমেরীয়রা মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণ অংশে বসতি স্থাপন করেছিল। এরা লিখন-পদ্ধতির সূচনাকারী হিসেবে পরিচিত। তাদের উদ্ভাবিত কিউনিফর্ম লিপি কাদামাটির ফলকে লেখা হতো। সুমেরীয়রা বছরকে ১২ মাসে বিভক্ত করে। তারা সময় নিরূপণে পানি ঘড়ি ব্যবহার করত।

তাদের প্রধান দেবতা ছিলেন সূর্যদেব শামাশ। জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত ও সময় নিরূপণে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একদিনকে ২৪ ঘণ্টা ও এক সপ্তাহকে ৭ দিনে ভাগ করার নিয়ম সুমেরীয়দের হাত ধরেই প্রচলিত হয়।

ব্যাবিলনীয় সভ্যতা

ব্যাবিলনীয় সভ্যতা গড়ে ওঠে মেসোপটেমিয়ার নগর ব্যাবিলনকে কেন্দ্র করে। রাজা হামুরাবি ছিলেন এর শ্রেষ্ঠ শাসক। তার তৈরি হামুরাবি আইনসংহিতা মানব ইতিহাসের প্রাচীনতম লিখিত আইন।

ব্যাবিলনীয়রা রোদে শুকানো ইট দিয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণ করত। শিল্পকলা ও চিত্রকলায় তাদের অবদান উল্লেখযোগ্য।

অ্যাসিরীয় সভ্যতা

অ্যাসিরীয়রা টাইগ্রিস নদীর তীরে আশুর নগরকে কেন্দ্র করে সভ্যতা গড়ে তোলে। তারা সামরিক শক্তির জন্য বিখ্যাত ছিল। প্রথমবারের মতো লোহার অস্ত্র, যুদ্ধ রথ এবং অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের ধারণা তারা প্রবর্তন করে। বৃত্তকে ৩৬০ ডিগ্রিতে ভাগ করার কৃতিত্বও অ্যাসিরীয়দের।

উপসংহার

মানব ইতিহাসে প্রাচীন সভ্যতাগুলো আধুনিক বিশ্বের ভিত্তি স্থাপন করেছে। মিশরীয়দের স্থাপত্যশৈলী, মেসোপটেমীয়দের কৃষি ও সেচ ব্যবস্থা, সুমেরীয়দের লিখন-পদ্ধতি, ব্যাবিলনীয়দের আইন এবং অ্যাসিরীয়দের সামরিক জ্ঞান—সব মিলিয়ে মানব সভ্যতার বিকাশে রেখেছে গভীর প্রভাব।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular