ইউরোপ থেকে অনুপ্রেরণা, আফ্রিকায় বাস্তবায়ন
যেমন ইউরোপীয় দেশগুলো *ইউরোপীয় ইউনিয়ন* গঠন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তেমনই আফ্রিকার দেশগুলোও তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক ঐক্যের স্বপ্ন বাস্তবায়নে হাত মিলিয়েছে। এই স্বপ্নের ফলেই জন্ম আফ্রিকান ইউনিয়ন (African Union)—যা আজ আফ্রিকার সর্ববৃহৎ আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা।
প্রতিষ্ঠার সূচনা
২০০০ সালে লিবিয়ার নেতা কর্নেল মোয়াম্মার আল কাদ্দাফির উদ্যোগে প্রস্তাব ওঠে ওএএউ (Organisation of African Unity)-কে প্রতিস্থাপন করে নতুন, আরও শক্তিশালী কাঠামোর আফ্রিকান ইউনিয়ন গঠনের।
লক্ষ্য ছিল—একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সর্বআফ্রিকান সংসদ, ন্যায়বিচার আদালত এবং একটি ১৫,০০০ সেনার শান্তিরক্ষা বাহিনী সহ একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্থা তৈরি করা।
২০০১ সালে আফ্রিকান ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে, সদরদপ্তর স্থাপিত হয় ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবা তে।
বিশ্বের ইতিহাসে সবচে শক্তিশালী কয়েকটি সাম্রাজ্য
সদস্যপদ বিস্তার: আফ্রিকার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে
আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে—
*১৯৬৪: তানজানিয়া (১৬ জানুয়ারি), মালাউই (১৩ জুলাই), জাম্বিয়া (১৬ ডিসেম্বর)
*১৯৬৫: বতসোয়ানা (৩১ অক্টোবর)
*১৯৬৮: মরিশাস, সোয়াজিল্যান্ড, নিরক্ষীয় গিনি
*১৯৯৬: সেশেলস (২৯ জুন)
*২০১১: দক্ষিণ সুদান (২৮ জুলাই) – সর্বশেষ সদস্য
বৈচিত্র্যময় সদস্য রাষ্ট্র
আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর উন্নয়ন, অর্থনৈতিক শক্তি ও সম্পদের ভাণ্ডার ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে—
1. নাইজেরিয়া – আফ্রিকার শীর্ষ তেল উৎপাদক দেশ (২০১৪ সাল থেকে), জনসংখ্যা ও ভূখণ্ডে বড় শক্তি।
2. গিনি বিসাউ – বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ, অর্থনীতি মূলত মাছ ধরা ও কৃষির ওপর নির্ভরশীল।
3. সেনেগাল – স্বর্ণ, তেল, তামা সম্পদ থাকলেও বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
4. ক্যামেরুন – ১১তম বৃহত্তম তেল উৎপাদক, তবুও জনসংখ্যার অর্ধেক দারিদ্র্যসীমার নিচে।

আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সমাজ
মঙ্গল সাম্রাজ্যের ইতিহাস — ঘোড়ার পিঠে উঠে বিশ্ব শাসন
আফ্রিকান ইউনিয়ন সাতটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছে—
* দক্ষিণ আফ্রিকা উন্নয়ন সমাজ (SADC)
* পশ্চিম আফ্রিকার অর্থনৈতিক সমাজ (ECOWAS)
* কেন্দ্রীয় আফ্রিকান রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক সমাজ (ECCAS)
* পূর্ব আফ্রিকান সমাজ (EAC)
* সাহেল-সাহারিয় রাষ্ট্রসমূহ
* পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ বাজার (COMESA)
* আরব মাগরেব ইউনিয়ন
মৌলিক নীতি ও উন্নয়নের সম্ভাবনা
আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রধান নীতিগুলো—
* সদস্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা।
* অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসা সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়া।
* গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ প্রতিরোধে সরাসরি হস্তক্ষেপের অধিকার।
* সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে মধ্যস্থতা।
ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সংহতি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও শান্তিরক্ষা সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেলে আফ্রিকান ইউনিয়ন মহাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।