Sunday, October 12, 2025
Google search engine
Homeঅনুপ্রেরণাঅলসতা দূর করার কার্যকরী উপায়: জীবন কে সক্রিয় করার পথ

অলসতা দূর করার কার্যকরী উপায়: জীবন কে সক্রিয় করার পথ

বাংলা প্রবাদে আছে—“অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” অর্থাৎ, অলসতা মানুষকে অগ্রগতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, জীবনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। কর্মক্ষেত্র থেকে ব্যক্তিগত জীবন—প্রতিটি ক্ষেত্রেই সক্রিয় থাকার বিকল্প নেই। তবে অনেকের মধ্যেই অলসতার প্রবণতা বেশি, ফলে কাজ পিছিয়ে যায়, স্বপ্ন পূরণ হয় না। সচেতনভাবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এই অলসতা ধীরে ধীরে দূর করা সম্ভব।

প্রয়োজন সুপরিকল্পিত জীবন

অলসতা কাটাতে প্রথম শর্ত হলো পরিকল্পনা। কাজ যদি অগোছালোভাবে শুরু হয়, তবে তা মাঝপথে থেমে যাওয়া স্বাভাবিক। প্রতিটি কাজের জন্য অগ্রাধিকার নির্ধারণ, সময় ভাগ করে নেওয়া এবং বিশ্রামের সময়ও পরিকল্পনার মধ্যে রাখা জরুরি। একটি সুশৃঙ্খল পরিকল্পনাই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং অলসতাকে দূরে সরিয়ে রাখে।

কাজ ফেলে না রেখে এখনই শুরু করা

অনেকেই ভালো পরিকল্পনা করে কিন্তু বাস্তবায়নে দেরি করে। “কাল থেকে শুরু করব” ভাবনাই হলো অলসতার মূল। যে কোনো কাজ তখনই শুরু করলে তার গতি দ্বিগুণ হয়, আর মনও মনে করে—এটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যেখানে দেরির সুযোগ নেই।

নিজের অসম্পূর্ণতার স্বীকৃতি

নিজেকে নিখুঁত মনে করলেই শেখার আগ্রহ হারিয়ে যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী নিউটনও স্বীকার করেছিলেন—তিনি কেবল জ্ঞানের সমুদ্রতীরে দাঁড়িয়ে আছেন। দুর্বলতা খুঁজে বের করে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা মানুষের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে এবং অলসতাকে দূরে রাখে।

আত্মবিশ্বাস বাড়ানো

যে কোনো কাজের আগে “হবে না” ধারণা অলসতাকে আরও জায়গা করে দেয়। আমরা জানি জ্যাক মা একাধিকবার চাকরিতে ব্যর্থ হয়েও আলিবাবার মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা এবং ব্যর্থতাকে অভিজ্ঞতা হিসেবে নেওয়াই হলো সাফল্যের পথ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে আনা

অলসতার অন্যতম কারণ হলো সময় নষ্ট করা। ফেসবুক, ইউটিউব বা টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে একবার ঢুকলে ঘন্টা কেটে যায় অজান্তে। প্রয়োজন ছাড়া এ ধরনের মাধ্যমে সময় কমানো গেলে কাজের জন্য বাড়তি সময় পাওয়া যায়, আর অলসতাও কমে আসে।

কাজের ফাঁকে বিনোদন

দীর্ঘক্ষণ একটানা কাজ করলে ক্লান্তি আসে, আর তখন অলসতা মাথাচাড়া দেয়। কাজের মাঝে হালকা গান শোনা, ছোট বিরতি নেওয়া বা কোনো শখের কাজ জুড়ে দিলে মন সতেজ থাকে এবং কাজও দ্রুত এগোয়।

নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম

ব্যায়াম শুধু শরীর নয়, মনেরও সক্রিয়তা বজায় রাখে। অল্প হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম ঝিমুনি কাটায়, শক্তি জোগায় এবং মনোযোগ বাড়ায়। নিয়মিত শরীরচর্চা কর্মক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করে তোলে।

সঠিক জীবনযাপন

পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার এবং বিশ্রাম ছাড়া শরীর যন্ত্রের মতো অচল হয়ে যায়। বিশৃঙ্খল জীবনযাপন অলসতাকে বাড়িয়ে দেয়। তাই নিয়মিত ঘুম, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং সময়মতো বিশ্রাম অলসতা কাটানোর মূল চাবিকাঠি।

জীবনের ভুল থেকে শিক্ষা

অতীতে অলসতার কারণে যদি পড়াশোনা বা কাজের ক্ষতি হয়ে থাকে, তবে তা থেকেই শিক্ষা নিতে হবে। সেই ভুল যেন আবার না হয়, সেটিই হবে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করার অনুপ্রেরণা।

সাফল্যের জন্য নিজেকে পুরস্কৃত করা

মানুষ সবসময় অনুপ্রেরণা চায়। ছোট অর্জন উদযাপন করলে কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়ে। নিজের সাফল্যে নিজেকে পুরস্কৃত করা কিংবা বন্ধুদের সাথে উদযাপন করাও অলসতা দূর করার একটি কার্যকর উপায়।

শেষকথা

অলসতা দূর করা একদিনের কাজ নয়। ধীরে ধীরে পরিকল্পনা, আত্মবিশ্বাস, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং ইতিবাচক অভ্যাসের মাধ্যমে সক্রিয় জীবন গড়ে ওঠে। অলসতাকে পরাজিত করা মানেই হলো নিজের ভবিষ্যৎকে সফলতার পথে এগিয়ে নেওয়া।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular