মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা হলো এক অদৃশ্য ঢাল, যা প্রতিনিয়ত রোগের সঙ্গে লড়াই করে। কারও প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি শক্তিশালী হয়, তাহলে সহজে অসুস্থ হয় না। আর আক্রান্ত হলেও দ্রুত সেরে ওঠে। প্রতিদিনের জীবনযাপনে ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন এনে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়ানো সম্ভব।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
শরীরের কোষ গঠন থেকে শুরু করে রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শক্তি—সবকিছুতেই প্রোটিন অপরিহার্য। ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, ডাল ও দুধজাত খাবারে পাওয়া যায় উচ্চমানের প্রোটিন। দৈনিক চাহিদা হিসেব করতে হবে শরীরের ওজনের প্রতি কেজিতে প্রায় ১ গ্রাম।
ফুসফুসের রোগের কারণ, লক্ষণ ও ফুসফুস ভালো রাখার উপায়
ভিটামিন সি: রোগ প্রতিরোধের ঢাল
ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরকে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। লেবু, কমলা, পেয়ারা, আমলকী, কাঁচা মরিচ, জাম্বুরা—এসব ফল ও সবজিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। যেহেতু শরীর এই ভিটামিন জমা রাখতে পারে না, তাই প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় রাখা জরুরি।
জিঙ্ক ও ভিটামিন বি১২
জিঙ্ক শ্বেত রক্তকণিকার কার্যক্ষমতা বজায় রাখে। বাদাম, শিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার এর ভালো উৎস।
ভিটামিন বি১২ স্নায়ুতন্ত্রকে সুরক্ষা দেয় এবং রোগ থেকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে।এটি ডিম, দুধজাত খাবারে পাওয়া যায়। নিরামিষভোজীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে সম্পূরক গ্রহণ করা দরকার।

প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক
- মধু: অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে। সর্দি-কাশি ও গলাব্যথায় বিশেষ উপকারী।
- রসুন: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, কোলেস্টেরল কমানো ও সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।
- আদা: হজম শক্তি বাড়ায়, ব্যথা কমায় এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করে।
- কালিজিরা: স্থূলতা, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। প্রাচীনকাল থেকেই “মৃত্যু ছাড়া সব রোগের ওষুধ” নামে পরিচিত।
সিগারেট আপনার শরীরকে যেভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে
জীবনযাপন ও অভ্যাস
- শরীরচর্চা: হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার বা হালকা ব্যায়াম শরীরকে সক্রিয় রাখে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- মানসিক স্বাস্থ্য: হাসিখুশি থাকা, দুশ্চিন্তা কমানো, এবং সৃজনশীল কাজে যুক্ত থাকা মনকে প্রফুল্ল রাখে। প্রফুল্ল মন শরীরকেও সুস্থ রাখে।
- ঘুম ও বিশ্রাম: পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পুনরুজ্জীবিত করে।
উপসংহার
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করা কোনো একদিনের কাজ নয়। নিয়মিত সুষম খাবার, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, শরীরচর্চা এবং মানসিক প্রশান্তির মাধ্যমে এটি গড়ে তোলা যায়। প্রকৃতির ভেতরেই লুকিয়ে আছে অসুখের প্রতিষেধক। তাই সচেতনভাবে জীবনযাপনই হতে পারে সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের চাবিকাঠি।