সভ্যতা দ্রুত এগিয়েছে: প্রযুক্তি, যোগাযোগ, যুদ্ধাবস্থা—সবকিছু যেন এক ঝটিকায় বদলেছে। এয়ার-কন্ডিশনারে ঠান্ডা ঘর, ফ্রিজে সংরক্ষিত খাবার, দ্রুত বিমানযাত্রা—সবই মানুষের আরামের চাহিদা মেটাতে হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর সময় লকডাউন চলাকালে আমরা প্রকৃতিতে এমন কিছু পরিবর্তন দেখেছি যা আমদেরকে সতর্কবাণী দিয়েছে। প্রকৃতি—নদী, বায়ু, বন— অনুভুতিহীন হয়ে যায়নি। COVID-19 মহামারীর সময় প্রকৃতিতে কিছু পরিবর্তন দেখা গেছে যা বলেছে, প্রকৃতি কখনো চুপ থাকেনি।
COVID-১৯-এর সময় প্রকৃতির পৃথিবীতে কি পরিবর্তন ঘটলো?
লকডাউনের ফলে বহু শহরে যানবাহন, বিমান ও শিল্প-কারখানার কার্যক্রম কমে যাওয়ায় বায়ুদূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছিল। NO₂, PM₂.₅, PM₁₀, CO ও SO₂-র পরিমাপ কয়েক সপ্তাহে প্রায় ৬গুণ হ্রাস পেয়েছিল।
স্থবির হয়েছে কিছু যানবাহনচলাচল ও বিমান চলাচল, তাই দূষণ কম-কমেছে এবং নীলাভ আকাশ ও বিশুদ্ধ বাতাস তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এ সব পরিবর্তন স্থায়ী হয়নি, শিল্প ও জীবনযাত্রার গতি ফেরার সঙ্গে-সঙ্গে বাতাসে দূষণও ফিরে এসেছে।
এন্টিবায়োটিক যেভাবে বিপদ ডেকে আনতে পারে
বর্তমান অবস্থা: কি বদলেছে ২০২৪-২০২৫-এ?
২০২৪ সালে বিশ্বের CO₂ নির্গমন পুরনো রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে: মোট ৩৭.৮ গিগাটন CO₂ নির্গমন হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ০.৮% বেশি।
উন্নত দেশগুলোর কারখানা ও শক্তি সেক্টর কিছুটা কয়লা ব্যবহার কমিয়েএনেছে।কিন্তু উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ায় নির্গমন কম রাখা কঠিন হয়েছে।
বিশ্বের CO₂ পারমাণবিক ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা এখনও পুরোপুরি কমানো যায়নি। “ক্লিন এনার্জি” যেমন সৌর বিদ্যুতে বিনিয়োগ বাড়ছে, তবে অন্যসব সেক্টরগুলোর পরিবর্তন ধীরে ধীরে ঘটছে।
GHG নির্গমন (CO₂-সমতুল গ্যাস মিলিয়ে) ২০২৪-তে ২০২৩-এর তুলনায় প্রায় ১.৩% বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে, নাকি সতর্কবার্তা দিচ্ছে?
এই প্রসঙ্গে “প্রকৃতির প্রতিশোধ” শব্দটি খুব শক্তিশালী হলেও, এটি এক ধরনের প্রতিফলন: মানুষের অতিকায় ক্রিয়াকলাপ প্রকৃতি ও পরিবেশে প্রভাব ফেলছে, এবং সেই প্রভাব ফিরে আসছে। শুধু ভাইরাস নয়, বায়ুদূষণ ও জলবায়ুর পার্থক্য তৈরি হচ্ছে।
বাতাসের দূষণ কমে গিয়ে দেখা গেছে স্বল্প-সময়ের জন্য জনগণের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে, চোখের জ্বালাপোড়া, শ্বাসকষ্ট কমেছে। যদিও করোনা-লকডাউনের সময় এই প্রভাব ছিল,কিন্তু দুষণ কমানো ও গ্রীনহাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ মেয়াদে কোন পরিবর্তন তৈরি হয়নি। CO₂-স্তর বাড়ছে প্রতিদিন; ২০২৪-তে বাতাসে CO₂ ঘনত্ব প্রায় ৪২২.৫ পিপিএম হয়েছিল যা ২০২৩-এর চেয়ে প্রায় ৩ পিপিএম বেশি। এটি প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় প্রায় ৫০% বেশি।
বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড়: উৎপত্তি, প্রভাব ও সতর্কতা
আগামীর জন্য কি করা যেতে পারে?
“নেট জিরো” মডেল দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন যাতে নির্গমন বৃদ্ধি বন্ধ হয়।সব দেশেই শক্তি খাত, পরিবহন, শিল্পে ক্লিন এনার্জি ও নবায়নযোগ্য উৎসের ব্যবহার আনতে হবে।
শহরের পরিকল্পনায় যানবাহন কমিয়ে আনা, পাবলিক পরিবহন উন্নত করা ও গাছের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি।
শক্তি অপচয় কমিয়ে নেওয়া, ফ্রেয়ন/এসএফসি সূত্রক গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা এবং গ্রীন হাউস গ্যাসের নির্গমন রিপোর্টিং ও মনিটরিং শক্তিশালী করা দরকার।
জনগণের সচেতনতা বাড়াতে হবে যে ‘উন্নতি’ এবং ‘আবশ্যকীয় আরাম’ প্রকৃতি থেকে নিতে হবে।
উপসংহার
COVID-19 মহামারী প্রকৃতিতে সাময়িক বিশ্রাম এনে দিয়েছিল — বাতাস পরিষ্কার হয়েছিল, যানবাহন কম চলেছিল, মানুষের শব্দ কমে গিয়েছিল। তবে একটি বড় শিক্ষা হলো: প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে না, বরং আমাদের কর্মকাণ্ডের প্রভাব ফিরে আসছে। বর্তমান সময় একটা মোড়—যেখানে দ্রুত পরিবর্তন না আনলে আগামী প্রজন্ম ভয়াবহ জলবায়ু, বন্যা, গরম এবং দুষণ-সংক্রান্ত বিপদগুলোকে মোকাবিলা করবে।আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার যে, প্রকৃতি শুধু শাস্তি নয়; সে সূচনা করছে একটি নতুন অধ্যায় যেখানে মানুষ ও প্রকৃতির সুর মিলিয়ে চলার পথ খুঁজে নিতে হবে।