Sunday, October 12, 2025
Google search engine
Homeস্বাস্থ্যগ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসার ডিজিজ (PUD): কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসার ডিজিজ (PUD): কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

গ্যাস্ট্রিক আমাদের দেশে অত্যন্ত কমন একটি সমস্যা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে পেপটিক আলসার ডিজিজ (PUD) বলা হয়। এটি অনেক সময়ে হালকা সমস্যা মনে হলেও অবহেলায় মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। তাই গ্যাস্ট্রিক সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।

গ্যাস্ট্রিক কী?

আমাদের পাকস্থলীতে খাবার হজমের জন্য বিভিন্ন এনজাইম ও এসিড রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হলো হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCl)। যখন এই এসিডের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় বা গ্যাস জমে পাকস্থলীর আস্তরণে চাপ ফেলে, তখন আমরা বুকজ্বালা, পেটব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করি। এ অবস্থাকেই সাধারণভাবে “গ্যাস্ট্রিক” বলা হয়।

গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ

গ্যাস্ট্রিক হঠাৎ দেখা দেয় না, বরং দীর্ঘদিনের প্রদাহ ও অনিয়মের ফলেই শুরু হয়। প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণ মনে হলেও অবহেলায় আলসার বা ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

  • খাওয়ার প্রতি অনীহা
  • বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • বুক ও পেট জ্বালাপোড়া
  • ঘাড় ও পিঠে ব্যথা অনুভব
  • বারবার পেটব্যথা হওয়া
  • পেট ফোলা অনুভূত হওয়া
  • অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়া

গ্যাস্ট্রিকের কারণ

গ্যাস্ট্রিক সাধারণত জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের অনিয়ম থেকে তৈরি হয়। এর প্রধান কারণগুলো হলো:

1. খাবারে অনিয়ম – নির্দিষ্ট সময়ে না খেলে পাকস্থলীতে এসিড জমা হয়।

2. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস – ভাজাপোড়া, চর্বিযুক্ত, ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার গ্যাস্ট্রিক বাড়ায়।

3. পানি কম খাওয়া – শরীরে পানির অভাবে এসিডিটি বেড়ে যায়।

4. ধূমপান ও অ্যালকোহল – এগুলো পাকস্থলীর এসিড ক্ষরণ বাড়ায়।

5. ঘুমের অনিয়ম – রাতে না ঘুমালে হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা হয়।

6. খাওয়ার সময় কথা বলা – এতে অতিরিক্ত বাতাস ঢুকে এসিডিটি বাড়ে।

7. ভুল আসনে খাওয়া – চেয়ার-টেবিলের বদলে মেঝেতে বসে খাওয়া হজমের জন্য ভালো।

8. অতিরিক্ত খাওয়া – পাকস্থলীতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।

প্রতিকার প্রতিরোধ

গ্যাস্ট্রিক এড়াতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে জীবনযাত্রার পরিবর্তন অপরিহার্য। নিচে কিছু কার্যকর অভ্যাস দেওয়া হলো:

১. নিয়মিত রুটিনমাফিক খাওয়া

প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খেলে পাকস্থলী এসিড সঠিকভাবে ব্যবহার করে। এতে হজম ভালো হয় ও গ্যাস্ট্রিকের ঝুঁকি কমে।

২. সুষম ও লঘুপাক খাবার খাওয়া

তৈলাক্ত ও ঝাল খাবার কমিয়ে ভাত, ডাল, শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া অভ্যাস করতে হবে।

৩. পর্যাপ্ত ঘুম

খাওয়ার পর অন্তত ২ ঘণ্টা জেগে থেকে তারপর ঘুমানো উচিত। রাতের গভীরে ঘুম শরীরের হজম ক্ষমতা বাড়ায়।

৪. পরিমিত খাদ্যাভ্যাস

পেট ভরে খাওয়া নয়, বরং অল্প অল্প করে খাওয়া উত্তম।

৫. পর্যাপ্ত পানি পান

দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটাই কমে।

৬. স্ট্রেস কমানো

অতিরিক্ত মানসিক চাপও গ্যাস্ট্রিক বাড়ায়। তাই টেনশন মুক্ত থাকার চেষ্টা করা উচিত।

৭. নিয়মিত ব্যায়াম

হালকা ব্যায়াম যেমন দড়ি লাফ, হাঁটা বা জগিং হজমে সহায়ক।

গ্যাস্ট্রিকের প্রাকৃতিক প্রতিকার

ঔষধ ছাড়াও কিছু প্রাকৃতিক উপাদান দ্রুত আরাম দেয়:

  • আদা: হজমে সহায়ক ও গ্যাস প্রশমিত করে।
  • দই: উপকারী ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলীর প্রদাহ কমায়।
  • ডাবের পানি: বুকজ্বালা কমাতে দ্রুত কাজ করে।
  • শসা: প্রদাহ কমায়, পেট ঠান্ডা রাখে।
  • আনারস: এতে থাকা ব্রোমেলিন এনজাইম হজমে সাহায্য করে।
  • পুদিনা পাতা, পেঁপে, রসুন – এসিড কমাতে কার্যকর।

কেন শুধুমাত্র ওষুধ খাওয়া সমাধান নয়?

অনেকে গ্যাস্ট্রিক হলে ফার্মেসি থেকে ওমেপ্রাজল, ইসোমেপ্রাজল ইত্যাদি কিনে খান। এতে সাময়িক আরাম মিললেও আসল সমস্যার সমাধান হয় না। দীর্ঘদিন এভাবে চললে আলসার এমনকি পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। তাই ওষুধের উপর নির্ভর না করে জীবনধারা পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক প্রতিকার গ্রহণ করাই উত্তম।

উপসংহার

গ্যাস্ট্রিক একেবারেই নিরীহ কোনো সমস্যা নয়, বরং অবহেলায় তা প্রাণঘাতী হতে পারে। কিন্তু একটু সচেতনতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ঘুম ও ব্যায়ামের মাধ্যমে একে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। মনে রাখবেন—সুস্থ শরীর মানেই সুখী জীবন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular