আজকের ব্যস্ত জীবনে প্রতিদিনের ঘটনা, কাজের সময়সূচি বা পড়াশোনার বিষয় মনে রাখা অনেকের জন্যই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের স্মৃতিশক্তি সরাসরি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত। ভুলে যাওয়া এখন সাধারণ একটি সমস্যা হলেও সুখবর হলো—বিজ্ঞানীরা এমন কিছু উপায় আবিষ্কার করেছেন যা মেনে চললে যে কেউ স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে পারে।
নিউরোপ্লাস্টিসিটি নিয়ে গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, মস্তিষ্ক স্থির নয়—এটি প্লাস্টিকের মতো নমনীয় এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এর ক্ষমতা বহুগুণে বাড়ানো যায়। চলুন জেনে নেই, কীভাবে নিয়মিত অনুশীলন ও জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনার স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ করে তুলবেন।
১. নতুন কিছু শেখার অভ্যাস করুন
মস্তিষ্ককে শরীরের পেশির মতোই ব্যায়াম করাতে হয়। প্রতিদিন একই কাজের পরিবর্তে নতুন ও চ্যালেঞ্জিং কিছু শিখুন—যেমন নতুন ভাষা, বাদ্যযন্ত্র, কবিতা লেখা, নাচ, গেম খেলা বা ধাঁধা সমাধান।
গবেষণা বলছে: একাধিক ভাষা জানা মানুষের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এক ভাষাভাষীদের তুলনায় অনেক বেশি।
ডিপ্রেশন: কারণ, লক্ষণ ও মুক্তির উপায়
২. জীবন ও কাজকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখুন
মস্তিষ্ক তথ্যকে সংগঠিতভাবে সংরক্ষণ করতে পছন্দ করে। পড়াশোনা বা কাজ করার সময় নির্দিষ্ট কাঠামো মেনে চলুন এবং নোট নিয়ে রাখুন। একই ধরনের কাজ একত্রিত করলে মনে রাখা সহজ হয়।
৩. গভীরে গিয়ে শিখুন
শুধু আউটলাইন নয়—প্রথমবার শেখার সময় বিষয়টির বিস্তারিত জানুন। যত বেশি বোঝার চেষ্টা করবেন, তত দীর্ঘ সময় সেটি মনে থাকবে।
৪. পুরনো বিষয় পুনরায় পড়ুন
মস্তিষ্কের তথ্য দীর্ঘস্থায়ী করতে নিয়মিত রিভিশন দিন। যেমন, কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ পরপর পুরনো নোট পড়ে নিন। ৫. সংক্ষিপ্ত কৌশল ব্যবহার করুন
দীর্ঘ বিষয় মনে রাখতে সংক্ষিপ্ত শব্দ, ছন্দ বা প্রথম অক্ষরের সমন্বয় ব্যবহার করুন। যেমন, রংধনুর সাত রঙ মনে রাখতে “বেনীআসহকলা”।
৬. প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা কমান
অল্পতেই গুগল বা সিরির সাহায্য নেওয়া মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তি কমিয়ে দেয়। নিজে ভাবার ও সমাধান খোঁজার অভ্যাস করুন।-
৭. নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুম
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো ও জাগা মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে।
৮. স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমান
অতিরিক্ত উজ্জ্বল স্ক্রিন ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এবং স্মৃতি দুর্বল করে।
৯. ধ্যান করুন
ধ্যান স্ট্রেস কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মস্তিষ্ককে স্বচ্ছন্দ রাখে। নিয়মিত ধ্যান স্মৃতিশক্তি উন্নত করার সহজ উপায়।
কীভাবে অল্প সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন
১০. নিয়মিত ব্যায়াম
শরীরচর্চা রক্ত প্রবাহ উন্নত করে, যা মস্তিষ্ককে পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ করে।
১১. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
উচ্চ স্ট্রেস কর্টিসোল হরমোন বাড়ায়, যা মস্তিষ্ক সংকুচিত করতে পারে। তাই রিলাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করুন।
১২. সামাজিক থাকুন
মানুষের সঙ্গে কথা বলা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। এমনকি ১০ মিনিট আলাপও উপকারী।
১৩. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
পানি মস্তিষ্কের কোষ সক্রিয় রাখে। সামান্য পানিশূন্যতাও স্মৃতি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
১৪. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অতিরিক্ত চিনি, ভাজা খাবার, লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
শাকসবজি, ফল, বাদাম, শস্য, মাছের তেল, জলপাই তেল, নারিকেল তেল বেশি খান।

শেষ কথা
স্মৃতিশক্তি জন্মগত নয়—এটি অনুশীলন ও সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে গড়ে তোলা যায়। আজ থেকেই ছোট ছোট অভ্যাস পরিবর্তন শুরু করুন, দেখবেন বয়স বাড়লেও আপনার স্মৃতি থাকবে তরুণের মতো সতেজ।