—
ফুটবল এমন এক খেলা, যা ধর্ম-বর্ণ-জাতি ভুলিয়ে সারা পৃথিবীর কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। এই খেলায় দারুণ পারফরম্যান্সে জনপ্রিয়তা পাওয়া অনেক তারকার মধ্যেই আছেন মুসলিম ফুটবলাররা। তারা শুধু মাঠ কাঁপিয়েই থেমে থাকেননি, নিজেদের জীবনযাপনেও ধর্মীয় মূল্যবোধকে ধরে রেখেছেন। আজ জানব বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ১০ জন মুসলিম ফুটবল তারকার গল্প
১. করিম বেনজেমা
ফ্রান্সের এই স্ট্রাইকারকে বলা হয় আধুনিক ফুটবলের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড। দীর্ঘদিন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলেছেন, জিতেছেন অসংখ্য শিরোপা—৫টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, ৪টি লা লিগাসহ মোট ২৩টি ট্রফি। ২০২২ সালে ব্যালন ডি’অর জিতে নিজের ক্যারিয়ারকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। বেনজেমা ১৯৮৭ সালে লিওঁ শহরে জন্ম নেন একটি মুসলিম পরিবারে।
২. উসমান দেম্বেলে
ফরাসি উইঙ্গার উসমান দেম্বেলে দারুণ গতি আর ড্রিবলিং দক্ষতার জন্য পরিচিত। জন্ম ১৯৯৭ সালে, ভেরন শহরে। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি ঝোঁক ছিল প্রবল। বার্সেলোনায় খেলার পর এখন তিনি ফ্রান্স জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্স দলেরও অংশ ছিলেন তিনি।
৩. জিনেদিন জিদান
ফুটবলের ইতিহাসে কিংবদন্তি নাম জিদান। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে শিরোপা এনে দেওয়া নায়ক। মাঠের খেলা যেমন মন্ত্রমুগ্ধকর ছিল, তেমনি কোচ হিসেবেও রিয়াল মাদ্রিদকে একের পর এক সাফল্য উপহার দিয়েছেন। ১৯৭২ সালে আলজেরিয়ান মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া জিদান সর্বকালের সেরাদের তালিকায় জায়গা পাকা করে নিয়েছেন।
ফুটবল খেলার ইতিহাস
৪. সাদিও মানে
সেনেগালের গর্ব সাদিও মানে। লিভারপুলের হয়ে এক যুগান্তকারী সময় কাটানোর পর এখন বায়ার্ন মিউনিখে খেলছেন। মাঠে যতটা দক্ষ, মাঠের বাইরে ঠিক ততটাই ধর্মপ্রাণ। ছোটবেলা থেকেই বাবা ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম, আর মানেও আজও নিয়মিত নামাজ পড়েন।
৫. ইউসুফ ফোফানা
ফরাসি মিডফিল্ডার ইউসুফ ফোফানা ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে আলোচনায় আসেন। তার দারুণ পারফরম্যান্স সবাইকে চমকে দেয়। ১৯৯৯ সালে প্যারিসে জন্ম নেওয়া ফোফানা মুসলিম পরিবার থেকে উঠে এসে জাতীয় দলে জায়গা করে নেন। বর্তমানে খেলছেন মোনাকোর হয়ে।
৬. ইব্রাহিমা কোনাতে
লিভারপুলের রক্ষণভাগের ভরসা কোনাতে। ১৯৯৯ সালে প্যারিসে জন্ম, বংশপরিচয়ে মালিয়ান। মাত্র ২৪ বছর বয়সেই ইউরোপিয়ান ফুটবলে নিজেকে শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। ছয় ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতার এই ডিফেন্ডার মুসলিম হিসেবে পরিচিত।
৭. ইদ্রিসা গানা গিয়ে
সেনেগালের এই মিডফিল্ডার পিএসজি এবং জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তার পরিশ্রম, শৃঙ্খলা এবং রক্ষণাত্মক দক্ষতা তাকে আলাদা করে তোলে। ১৯৮৯ সালে জন্ম নেওয়া ইদ্রিসা নিজেকে একজন practicing মুসলিম হিসেবেই গর্বের সঙ্গে তুলে ধরেন।
৮. আনসু ফাতি
বার্সেলোনার তরুণ প্রতিভা আনসু ফাতি। মাত্র ২০ বছর বয়সেই বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। জন্ম ২০০২ সালে গিনি-বিসাউতে। স্পেন জাতীয় দলের হয়ে খেললেও ধর্মীয় পরিচয়ে তিনি একজন মুসলিম। ফুটবল বিশ্বের ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবে তাকেই ধরা হয়।
সেরা দশ মুসলিম ফুটবলার
৯. ইডেন হ্যাজার্ড
বেলজিয়ামের নামকরা ফুটবলার হ্যাজার্ডও মুসলিম পরিবারে বেড়ে ওঠেন। ১৯৯১ সালে জন্ম নেওয়া এই উইঙ্গার দীর্ঘ সময় চেলসিতে খেলে জনপ্রিয়তা পান, পরে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন। যদিও ক্যারিয়ারের শেষদিকে ইনজুরিতে ভুগেছেন, তবুও ফুটবল দুনিয়ায় তার অবদান অস্বীকার করার নয়।
১০. ইউনুস মুসা
তালিকার শেষ নামটি তরুণ ফুটবলার ইউনুস মুসা। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম, বেড়ে ওঠা ইতালিতে, তবে খেলেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দলের হয়ে। ২০০২ সালে জন্ম নেওয়া এই মিডফিল্ডার বর্তমানে ভ্যালেন্সিয়া ও এসি মিলানের হয়ে খেলছেন। পরিবার থেকে পাওয়া মুসলিম পরিচয় তিনি গর্বের সঙ্গে ধারণ করেন।
উপসংহার
ফুটবলের মাঠে যেমন তাদের দক্ষতা অস্বীকার করার নয়, তেমনি বিশ্বাস, অধ্যবসায় আর কঠোর পরিশ্রম দিয়ে তারা হয়েছেন লক্ষ মানুষের অনুপ্রেরণা। মুসলিম ফুটবলারেরা প্রমাণ করেছেন— খেলার দুনিয়ায় ধর্ম-বর্ণ কোনো বাধা নয়; প্রতিভা আর নিষ্ঠাই আসল পরিচয়। তাদের সাফল্যের গল্প ভবিষ্যতের খেলোয়াড়দের পথ দেখাবে, অনুপ্রাণিত করবে আরো স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যেতে।
—