“সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না”—এ কথাটা আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। কিন্তু বাস্তবে আমরা বেশিরভাগ সময়ই তা ভুলে যাই। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা বা তরুণ প্রজন্ম, আমরা অনেকেই জানি সময় অপচয় করা কত বড় ক্ষতি ডেকে আনে, তারপরও একের পর এক অমূল্য মুহূর্ত হারিয়ে ফেলি। তাই আজকের আলোচনায় থাকছে—কীভাবে সহজ কিছু নিয়ম মেনে চললে সময় অপচয় থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়।
সময় চোরদের চিনে নিন
প্রথমেই দরকার বোঝা, আসলে আপনার সময় কোথায় নষ্ট হচ্ছে। কেউ হয়তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইউটিউবে ঘুরে বেড়ান, কেউ ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে সময়ের খেয়াল হারিয়ে ফেলেন। আবার কেউ হয়তো ই-মেইল বা মোবাইলের নোটিফিকেশনে আটকে যান। এই “সময় চোর”গুলোকে চিহ্নিত না করলে এগুলো থেকে মুক্তিও পাওয়া যাবে না।
কীভাবে অল্প সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন
ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি নিয়ন্ত্রণ করুন
আজকের দিনে সবচেয়ে বড় সময় অপচয়ের জায়গা হলো ইন্টারনেট আর সোশ্যাল মিডিয়া। কাজে প্রয়োজন হলে ব্যবহার করতেই হবে, কিন্তু “ফাও নেটে” ভেসে গেলে সময় গিলে খায়। তাই কাজ ছাড়া অন্য সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার সীমিত করতে হবে। চাইলে কিছু অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্লক করেও রাখা যায়।
কাজের প্রতি মনোযোগী হন
একসাথে অনেক কাজ করার চেষ্টা অনেকসময় উল্টো ফল আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, অল্প কয়েকজন ছাড়া আসলে কেউই একসাথে একাধিক কাজ দক্ষভাবে করতে পারে না। বরং ধীরে ধীরে, একেবারে মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে ভুল কম হবে, ফলে বারবার সংশোধনের ঝামেলা বাঁচবে।
রুটিন বানান এবং মেনে চলুন
প্রতিদিনের কাজের জন্য ছোট্ট একটা তালিকা তৈরি করুন। ধরুন, টিভি দেখার জন্য আধঘণ্টা বরাদ্দ করেছেন, তাহলে কখনোই তার বেশি সময় দেবেন না। নিয়মিত তালিকা মেনে চললে ধীরে ধীরে অভ্যাস তৈরি হবে। তখন সময় আর আপনার হাত ফসকে যাবে না।
শুরু করা কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়বেন না
অনেকেই একটা কাজ শুরু করেও মাঝপথে ফেলে দেন, নতুন কিছু শুরু করেন। এতে আগের কাজের জন্য দেয়া সময় পুরোপুরি অপচয় হয়ে যায়। তাই যে কাজই শুরু করুন না কেন, শেষ না করা পর্যন্ত হাল ছাড়বেন না।
যেভাবে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাবেন: বৈজ্ঞানিক ও বাস্তব ১০উপায়
বিশ্রামও জরুরি
সময় বাঁচাতে গিয়ে অনেকেই অবিরাম কাজ করতে থাকেন। অথচ টানা ১০ ঘণ্টা কাজ করলে শরীর ও মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে যায়। ফলে পরবর্তী সময়গুলো পুরোপুরি নষ্ট হয়। তাই নির্দিষ্ট বিরতিতে বিশ্রাম নেওয়াটা সময় ব্যবস্থাপনারই অংশ।
দিন শেষে বিশ্লেষণ করুন
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে একটু ভেবে দেখুন—আজ সময়টা কোথায় গেল? কোন কাজগুলোতে অপ্রয়োজনীয় সময় নষ্ট হলো? এসব লিখে রাখলে পরদিন থেকে সচেতন থাকা সহজ হয়।
সময় মানে জীবন
সময় হলো আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। অর্থ হারালে আবার উপার্জন করা যায়, কিন্তু একবার চলে যাওয়া সময় আর ফেরে না। তাই এখন থেকেই সচেতন হোন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অকারণ আলাপ বা দেরি করার অভ্যাস বাদ দিন। সময়কে কাজে লাগান শেখায়, পড়াশোনায়, দক্ষতা বাড়াতে বা প্রিয়জনের সাথে সময় কাটাতে।