Sunday, November 2, 2025
Google search engine
Homeস্বাস্থ্যসতেজতার জন্য কোমল পানীয় পান করে নিস্তেজতা ডেকে আনছেন না তো?

সতেজতার জন্য কোমল পানীয় পান করে নিস্তেজতা ডেকে আনছেন না তো?

গরমে এক গ্লাস ঠান্ডা কোমল পানীয় হাতে পেলে তৃষ্ণা মিটে যায়, শরীরও সতেজ লাগে। খাবারের পর অনেকেই হজমের অজুহাতে আবার কেউ শুধুই আনন্দের জন্য এটি পান করেন। ছোট-বড় সবাই কমবেশি এই পানীয়র প্রতি আকৃষ্ট। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি—যা দিয়ে নিজেকে সতেজ করছেন, সেটিই আসলে শরীরকে কতটা ধ্বংস করছে?

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত দুই গ্লাস বা তার বেশি কোমল পানীয় পানকারীদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায় প্রায় ২১%। শুধু তাই নয়, কোমল পানীয় শরীরের ভেতরে ধীরে ধীরে তৈরি করে দেয় নানান জটিল রোগের ভিত্তি।

 কোমল পানীয়তে কী থাকে?

প্রথম দিকে লেবু, মধু আর পানি মিশিয়ে তৈরি হতো কোমল পানীয়। এখন প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এতে মেশানো হয় চিনি, ক্যাফেইন, কৃত্রিম রং, কৃত্রিম মিষ্টি, ফসফরিক এসিড, কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস এবং সংরক্ষণকারী রাসায়নিক। অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

 শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব

 ১. ওজন বৃদ্ধিঃ

এক ক্যান কোমল পানীয়তে থাকে প্রায় **১০ চামচ চিনির সমান ক্যালরি**। এত ক্যালরি বার্ন করতে গেলে সপ্তাহে কয়েক ঘণ্টা জিমে কাটাতে হবে, যা বাস্তবে সম্ভব নয়। ফলাফল—চিনি জমে গিয়ে বাড়ায় ফ্যাট ও ওজন।

২. দাঁতের ক্ষয়ঃ

চিনির অতিরিক্ত ব্যবহারে দাঁতে ক্যাভিটি তৈরি হয়। ফসফরিক এসিড দাঁতের এনামেল নষ্ট করে, ফলে দাঁত দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৩. হজমের ক্ষতিঃ

অনেকে মনে করেন কোমল পানীয় হজমে সাহায্য করে। আসলে এটি পাকস্থলীর তাপমাত্রা নষ্ট করে হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে। খাবার সঠিকভাবে ভাঙার বদলে পাকস্থলীতে তৈরি হয় **গ্যাস ও অ্যাসিডিটি**।

 ৪. ইথিলিন গ্লাইকলের বিষক্রিয়াঃ

কিছু কোমল পানীয়তে ব্যবহার হয় ইথিলিন গ্লাইকল, যা ফ্রিজারে তরল জমাট বাঁধা ঠেকায়। অথচ এটি এক ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক। এর ফলে হতে পারে লিভার ও কিডনির সমস্যা, চর্মরোগ, মূত্রাশয়ের জটিলতা।

 ৫. ক্যাফেইনের আসক্তিঃ

কোমল পানীয়র ক্যাফেইন আমাদের বারবার পান করতে প্রলুব্ধ করে। এর ফলে দেখা দেয়—

* অনিদ্রা

* স্নায়বিক দুর্বলতা

* অনিয়মিত হৃদস্পন্দন

* গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে অকাল প্রসব বা গর্ভপাতের ঝুঁকি

 ৬. হাড় দুর্বল হওয়াঃ

ফসফরিক এসিড দীর্ঘদিন শরীরে জমে থাকলে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি তৈরি করে, ফলে দেখা দেয় হাড় ক্ষয় (অস্টিওপোরোসিস) সমস্যা।

৭. ক্রনিক কিডনি রোগঃ

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে দুই গ্লাস বা তার বেশি কোলা পান করলে ক্রনিক কিডনি রোগ বা দীর্ঘ মেয়াদী কিডনি রোগের  ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৮. পানি শূন্যতা ও পুষ্টি ঘাটতিঃ

তৃষ্ণা মেটাতে আমরা পানি বা ফলের জুসের বদলে কোমল পানীয় বেছে নিই। ফলে শরীর পায় না প্রাকৃতিক ভিটামিন-মিনারেল, বরং চিনি আর রাসায়নিক। এর ফলে শরীরে তৈরি হয় **ডিহাইড্রেশন ও পুষ্টি ঘাটতি**।

শেষকথা

কোমল পানীয় যতই সতেজ লাগুক, এর প্রভাব অস্থায়ী। শরীরের ভেতরে রেখে যায় রোগের বীজ—স্থূলতা, ডায়াবেটিস, দাঁতের ক্ষয়, কিডনি রোগ থেকে শুরু করে হৃদরোগ পর্যন্ত। তাই সতেজতার জন্য ক্ষণিকের আনন্দে নয়, দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতার জন্য বেছে নিন  পানি, ডাবের পানি, ফলের জুস বা লাচ্ছি।—

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular