মানুষ পৃথিবীতে বসবাস করছে প্রায় ৩০ লক্ষ বছর ধরে, কিন্তু পৃথিবীর বয়স নির্ণয়ের বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে মাত্র কয়েক শতাব্দী আগে। আজকাল কারও জন্ম হলে বার্থ সার্টিফিকেটে তারিখ লিখে দেওয়া হয়, কিন্তু আমাদের গ্রহের এমন কোনো সনদ নেই। তাই পৃথিবীর বয়স নির্ধারণ করতে বিজ্ঞানীদের খুঁজতে হয়েছে উত্তর—পাথরে, মহাসাগরে, এমনকি মহাকাশে। এই অনুসন্ধান কেবল বিজ্ঞান নয়, মানব কৌতূহলের ইতিহাসও বটে।
মূল কাহিনি: ভুল থেকে সত্যের পথে
১৭শ শতকে আয়ারল্যান্ডের আর্চবিশপ জেমস উশার বাইবেলের বিবরণ থেকে হিসাব করে ঘোষণা করেন—পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০৪ সালের ২৩ অক্টোবর। তাঁর মতে, ২০২০ সালে পৃথিবীর বয়স মাত্র প্রায় ৬,০০০ বছর। বিজ্ঞানীরা এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রমাণ খুঁজতে শুরু করলেন, যা ধর্মীয় গ্রন্থের বাইরের জগতে অবস্থিত।
কম্পিউটার আবিষ্কারের ইতিহাস: প্রাচীন অ্যাবাকাস থেকে আধুনিক মাইক্রোপ্রসেসর
১৮শ শতকে ফরাসি বিজ্ঞানী জর্জ লুই লেক্লিয়ার্ক দ্য বাফন ধারণা দেন যে গ্রহগুলো সূর্যের অংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ ১১ বছরের পরীক্ষা শেষে তিনি বলেন—পৃথিবীর বয়স ৭৪,৮৩২ বছরের বেশি নয়। কিন্তু এই হিসাবও বিজ্ঞানীদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
১৯শ শতকে ভূতত্ত্ববিদরা চেষ্টা করলেন পাথরের ঘনত্ব এবং পলির জমার হার মেপে বয়স নির্ণয় করতে। কিন্তু ফল এল উদ্ভট—৩ বছর থেকে ২৪০০ মিলিয়ন বছর পর্যন্ত পার্থক্য! অন্য একটি পদ্ধতিতে সাগরের লবণ জমার হার গণনা করা হলেও তা-ও ব্যর্থ হলো।

১৮৬২ সালে লর্ড কেলভিন নতুন যুক্তি দিলেন—পৃথিবী একসময় গলিত ছিল, তাই পাথরের ঠান্ডা হওয়ার হার মেপে বয়স জানা সম্ভব। তাঁর হিসাব—২০–৪০ মিলিয়ন বছর। কিন্তু এও সঠিক ছিল না।
মোবাইল ফোন আবিষ্কার এর ইতিহাস:কল্পনা থেকে বাস্তবতায় চার দশকের যাত্রা
অবশেষে ১৯০২ সালে আর্নেস্ট রাদারফোর্ড ও ফ্রেডরিক সোডি **তেজস্ক্রিয় ক্ষয়** আবিষ্কার করেন। রাদারফোর্ড ইউরেনিয়ামের ক্ষয় ও হিলিয়াম উৎপাদনের হার ব্যবহার করে প্রথমবার একটি পাথরের বয়স হিসাব করলেন ৪০ মিলিয়ন বছর। পরে এই পদ্ধতিতে পৃথিবীর প্রাচীনতম পাথরের বয়স পাওয়া গেল ১৬৪০ মিলিয়ন বছর।
প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন বিজ্ঞানী **ক্লেয়ার প্যাটারসন** একটি উল্কাপিণ্ডে অতিক্ষুদ্র সিসা শনাক্ত করেন এবং পৃথিবী, চাঁদ ও উল্কাপিণ্ডের নমুনা তুলনা করে দেখান—সবই একই সময়ে, একই উপাদান থেকে গঠিত। ফলাফল: পৃথিবীর বয়স প্রায় **৪.৫৪ বিলিয়ন বছর** বা সাড়ে চারশো কোটি বছর।
পৃথিবীর ‘বার্থ সার্টিফিকেট’
৩০০ বছরের প্রচেষ্টা, অগণিত ভুল আর নতুন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে অবশেষে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করতে সক্ষম হলেন। আজ যখন আমরা ৪.৫৪ বিলিয়ন বছরের কথা বলি, এটি শুধু একটি সংখ্যা নয়—এটি আমাদের গ্রহের জন্ম, বিবর্তন, এবং মহাবিশ্বে তার স্থান সম্পর্কে মানুষের জ্ঞানযাত্রার প্রতীক।




