Tuesday, September 16, 2025
Google search engine
Homeবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি: আমাদের ছায়াপথের রহস্য

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি: আমাদের ছায়াপথের রহস্য

মহাবিশ্বের অসংখ্য ছায়াপথের মধ্যে আমরা বাস করি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গায়। রাতের আকাশে যে দুধসাদা আলোক রেখার মতো দেখতে পাই, সেটিই আসলে এই বিশাল গ্যালাক্সির একাংশ। কোটি কোটি নক্ষত্র, গ্যাস, ধূলিকণা, অদৃশ্য ডার্ক ম্যাটার এবং অসংখ্য মহাজাগতিক বস্তু মিলে গঠিত এই সুবিশাল মহাকর্ষীয় পরিবার মানব কৌতূহলের অন্যতম কেন্দ্র।

গ্যালাক্সি কী?

গ্যালাক্সি হলো নক্ষত্র, গ্যাস, ধূলিকণা ও প্লাজমার বিশাল সমষ্টি, যা মহাকর্ষ বলের কারণে একত্র থাকে। প্রতিটি গ্যালাক্সিতেই থাকে লাখ কোটি নক্ষত্র, আর তাদের চারপাশে গড়ে ওঠে গ্রহ ও সৌরজগত। আমাদের সৌরজগত সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হলেও সূর্য নিজেও মিল্কিওয়ের কেন্দ্রকে ঘিরে ঘুরছে।

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির উৎপত্তি

১৬১০ সালে গ্যালিলিও প্রথম টেলিস্কোপ দিয়ে রাতের আকাশে তাকিয়ে মিল্কিওয়ে যে অসংখ্য নক্ষত্রের সমষ্টি তা আবিষ্কার করেন।

“গ্যালাক্সি” শব্দের উৎস গ্রিক ভাষা, যার অর্থ দুধের মতো আলোক রেখা। গ্রিক পুরাণে বলা হয় দেবী হেরার স্তন্যদুগ্ধ ছড়িয়ে পড়ে আকাশে তৈরি হয়েছিল এই আলোকিত ছায়াপথ—যার নাম মিল্কিওয়ে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রায় ১৩.৬ বিলিয়ন বছর আগে বিগ ব্যাং বিস্ফোরণের পর ধীরে ধীরে গ্যাসের মেঘ থেকে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সৃষ্টি হয়। পুরোনো গবেষণা অনুযায়ী HE 1523-0901 নামের এক নক্ষত্রের বয়স ১৩.২ বিলিয়ন বছর—যা সম্ভবত গ্যালাক্সির প্রাচীনতম অংশ।

মিল্কিওয়ের আকার গঠন

মিল্কিওয়ে একটি সর্পিল ছায়াপথ (Spiral Galaxy)।

ব্যাস প্রায় ৯০,০০০ আলোকবর্ষ। এতে রয়েছে প্রায় ১০০ বিলিয়নেরও বেশি নক্ষত্র। কেন্দ্রের চারপাশে নক্ষত্ররা বিশাল এক ডিস্ক আকারে ঘুরছে। সূর্য মিল্কিওয়ের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৮.৫ কিলোপারসেক দূরে।

এটি দেখতে অনেকটা ডিস্ক বা ঘূর্ণির মতো, যার মাঝখানে ঘন কেন্দ্রীয় অঞ্চল রয়েছে। এখানেই অবস্থিত একটি অতিভারী ব্ল্যাক হোল—স্যাজিটারিয়াস A*।

আলো দূরত্বের মাপকাঠি

মহাকাশের দূরত্ব বোঝাতে ব্যবহৃত হয় “আলোকবর্ষ”। আলো প্রতি সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার বেগে চলে।

এক বছরে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকেই বলা হয় এক আলোকবর্ষ।

উদাহরণস্বরূপ, সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ৮ মিনিট।

চাঁদ পর্যন্ত আলো যেতে সময় লাগে প্রায় ১.৩ মিনিট।

প্রতিবেশী গ্যালাক্সি

আমাদের নিকটতম বড় ছায়াপথ হলো অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি।এটি প্রায় ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে।

বর্তমানে মিল্কিওয়ে ও অ্যান্ড্রোমিডা প্রতি সেকেন্ডে ১৩০ কিমি বেগে পরস্পরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ধারণা করা হয় প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পরে দুটি গ্যালাক্সি একীভূত হবে।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বনাম পুরাণ

বিজ্ঞান: বিগ ব্যাং থেকে উৎপন্ন হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম মেঘ মহাকর্ষে সংকুচিত হয়ে নক্ষত্র সৃষ্টি করে, আর সেই নক্ষত্রদের সমষ্টি গড়ে তোলে গ্যালাক্সি।

পুরাণ: হেরা দেবীর দুধ আকাশে ছড়িয়ে পড়ে তৈরি হয় “Milky Way”—তাই নামের সাথে দুধের মিল রয়েছে।

ভারতীয় ধারণা: প্রাচীন জ্যোতির্বিদরা একে “আকাশগঙ্গা” বলতেন, কারণ এটি গঙ্গা নদীর আকাশীয় প্রতিরূপ মনে করা হতো।

উপসংহার

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি কেবল একটি ছায়াপথ নয়, বরং আমাদের অস্তিত্বের জন্মভূমি। কোটি কোটি নক্ষত্র, অসংখ্য গ্রহ, অদৃশ্য ডার্ক ম্যাটার ও রহস্যময় ব্ল্যাক হোল মিলে এটি মহাবিশ্বের এক অপার বিস্ময়। আকাশের দিকে তাকালে যে দুধসাদা আলোর রেখা আমরা দেখি, সেটিই আসলে আমাদের মহাজাগতিক বাড়ি—মিল্কিওয়ে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular