পৃথিবীতে প্রায় ৪২০০-এর বেশি ধর্মবিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠান প্রচলিত আছে। এদের মধ্যে অনেক ছোট উপজাতীয় বা স্থানীয় ধর্ম হয়তো আমরা নামও শুনিনি। কিন্তু কিছু ধর্ম আছে, যা কোটি কোটি মানুষের জীবনের অংশ—যা ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সভ্যতার সাথে গভীরভাবে মিশে আছে।
আজ চলুন জেনে নেওয়া যাক ২০২৫ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ১০টি অনুসৃত ধর্ম এবং তাদের বিশ্বাস ও বৈশিষ্ট্য।
১. খ্রিষ্টধর্ম
অনুসারী: প্রায় ২.৩–২.৪ বিলিয়ন (বিশ্বের জনসংখ্যার 28–31%)
প্রধান গ্রন্থ: বাইবেল (Old Testament + New Testament)
প্রধান উপাসনালয়: গীর্জা
মানবজাতির প্রতি ভালোবাসা ও সহমর্মিতার বাণী নিয়ে খ্রিষ্টধর্মের সূচনা করেন ঈসা মসীহ। রোমান সাম্রাজ্যের সময় শূলে চড়ানো হলেও, তাঁর অনুসারীরা তাঁর শিক্ষা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেন। বর্তমানে খ্রিষ্টধর্ম তিনটি বড় শাখায় বিভক্ত—রোমান ক্যাথলিক, অর্থোডক্স ও প্রোটেস্ট্যান্ট। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই খ্রিষ্টান সম্প্রদায় রয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি বন
২. ইসলাম
অনুসারী: প্রায়১.৯–২.০ বিলিয়ন (বিশ্বের জনসংখ্যার 24–26%)
প্রধান গ্রন্থ: পবিত্র আল-কোরআন
প্রধান উপাসনালয়: মসজিদ
ইসলাম শান্তি, ন্যায়বিচার ও এক আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের ধর্ম। এর পাঁচটি মূল স্তম্ভ হলো ‘কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্ব ও যাকাত’। নবী মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর সর্বশেষ প্রেরিত দূত, এবং মুসলিমরা বিশ্বাস করে—মানবজাতির সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরিত হয়েছেন। ইসলামে শূকর মাংস ও মদ্যপান নিষিদ্ধ এবং ব্যভিচার কঠোরভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ।
৩. হিন্দুধর্ম
অনুসারী: প্রায় ১.১৬–১.২০ বিলিয়ন (বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় 15%)
প্রধান গ্রন্থ: বেদ
প্রধান উপাসনালয়: মন্দির
হিন্দুধর্ম বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মগুলোর একটি। বহু দেব-দেবীর পূজার পাশাপাশি হিন্দুরা ব্রহ্মকে স্রষ্টা হিসেবে মানে। এতে তেত্রিশ কোটি দেবতার পূজার প্রচলন আছে বলে প্রচলিত। ভারত ও নেপাল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, এবং দুর্গাপূজা অন্যতম প্রধান উৎসব।
৪. বৌদ্ধধর্ম
অনুসারী: প্রায় ৩২৪–৫০৭ মিলিয়ন (৪–৭%)
প্রধান গ্রন্থ: ত্রিপিটক
প্রধান উপাসনালয়: বিহার
বর্তমান নেপালে জন্মগ্রহণকারী গৌতম বুদ্ধ মানবজীবনের দুঃখ ও মুক্তির পথ খুঁজতে রাজকীয় জীবন ত্যাগ করেন। ছয় বছরের সাধনার পর বোধি লাভ করে তিনি শেখালেন—দুঃখের মূল হলো বাসনা, আর মুক্তির পথ হলো অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুসরণ।
৫. লোক ধর্ম (Folk Religions)
অনুসারী: প্রায় ৪৩০ মিলিয়ন
এগুলো মূলত স্থানীয়, উপজাতীয় বা ঐতিহ্যভিত্তিক বিশ্বাস—যেমন আফ্রিকান উপজাতীয় ধর্ম, চীনা লোকবিশ্বাস, প্রাচীন শামানিজম ইত্যাদি।
৬. অন্যান্য ধর্ম (শিন্তো, বাহাই, জৈন ইত্যাদি)
অনুসারী: প্রায় ৬১ মিলিয়ন
এই ক্যাটাগরিতে একাধিক ছোট কিন্তু ঐতিহাসিক ধর্ম আছে। এর মধ্যে জাপানের শিন্তো ধর্ম, পারস্যে জন্ম নেওয়া বাহাই ধর্ম, এবং ভারতের প্রাচীন জৈনধর্ম উল্লেখযোগ্য।
৭. ইহুদি ধর্ম
অনুসারী:প্রায় ১৪.৬–১৪.৮ মিলিয়ন
প্রধান গ্রন্থ: তাওরাত
ইহুদি ধর্মের উৎপত্তি প্রায় ৪ হাজার বছর আগে। আব্রাহাম ও তাঁর বংশধরদের কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই ধর্ম বর্তমানে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। যদিও অনুসারীর সংখ্যা কম, তবে রাজনীতি, অর্থনীতি ও বিজ্ঞানে ইহুদিদের প্রভাব উল্লেখযোগ্য।
বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী ব্যক্তি — ২০২৫ সালের হালনাগাদ তালিকা
৮. শিন্তো
অনুসারী: প্রায় ১০৪ মিলিয়ন
জাপানের ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাস, যেখানে প্রকৃতি ও পূর্বপুরুষের আত্মাকে পূজা করা হয়। এতে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মগ্রন্থ বা একক ঈশ্বর নেই; বরং ‘কামি’ নামে আত্মাদের পূজা করা হয়।

৯. শিখধর্ম
অনুসারী: প্রায় ২৫–৩০ মিলিয়ন
প্রধান গ্রন্থ: গুরু গ্রন্থ সাহিব
পাঞ্জাবে জন্ম নেওয়া শিখধর্ম সমতা, এক ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং মানবসেবা শেখায়। শিখ পুরুষরা পাগড়ি ও দাড়ি রাখেন, আর নামের শেষে থাকে ‘সিংহ’ বা ‘কৌর’।
১০. জৈনধর্ম
অনুসারী: কয়েক মিলিয়ন (সঠিক সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়)
জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি এবং সকল প্রাণীর প্রতি অনুপম দয়া—এটাই জৈনধর্মের মূল শিক্ষা। জৈনরা চরম নিরামিষভোজী, এবং প্রাণহানি এড়াতে মুখে কাপড় ও হাতে ঝাড়ু ব্যবহার করে।
উপসংহার
বিশ্বের এই ১০টি ধর্ম শুধু মানুষের বিশ্বাস নয়, বরং তাদের সংস্কৃতি, নীতি ও জীবনধারার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সময়ের সাথে সাথে ধর্মীয় জনসংখ্যার হার পরিবর্তিত হলেও, প্রতিটি বিশ্বাস তার অনুসারীদের জীবনে গভীর প্রভাব রেখে চলেছে।




