প্রতি বছর বিশ্ববিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন ১০০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নির্বাচন করে, যারা তাদের কাজ, চিন্তা ও নেতৃত্বের মাধ্যমে লাখো মানুষকে অনুপ্রাণিত করেন। আমরা অনেক সময় ভাবি—কেন এই সফল মানুষ গুলো অন্যদের চেয়ে আলাদা? কেন আমরা তাদেরকে অনুসরণ করি?
উত্তর লুকিয়ে আছে তাদের দৈনন্দিন অভ্যাসে।
Stephen R. Covey এর বিশ্বখ্যাত বই The 7 Habits of Highly Effective People (১৯৮৯ সালে প্রকাশিত, বিক্রি হয়েছে ৪ কোটিরও বেশি কপি) আমাদের দেখায়—এই সফল মানুষরা কীভাবে ভিন্নভাবে চিন্তা করেন, কাজ করেন এবং নিজেদের গড়ে তোলেন।
আজ চলুন জেনে নিই সেই ৭টি অভ্যাস যা জীবন ও কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের ভিত্তি গড়ে তুলতে পারে।
অভ্যাস ১: Be Proactive – নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন
সফল মানুষরা কখনোই বাহ্যিক পরিস্থিতি বা পরিবেশকে দোষারোপ করেন না।
তারা জানেন, নিজের কাজ ও সিদ্ধান্তের দায়িত্ব শুধুই তাদের।
উদাহরণ: বৃষ্টির কারণে অফিসে দেরি হওয়া নিয়ে অজুহাত না দেখিয়ে, তারা আগেভাগেই বের হন। কারণ, দোষারোপ নয়—দায়িত্বশীলতাই তাদের প্রথম অভ্যাস।
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কার্যকর উপায়
অভ্যাস ২: Begin with the End in Mind – শেষটা মাথায় রেখে শুরু করুন
যেকোনো কাজ শুরুর আগে সফল মানুষরা কল্পনা করে নেন এর চূড়ান্ত ফলাফল কেমন হবে।
এটি তাদের জন্য দিকনির্দেশক কম্পাসের মতো কাজ করে।
উদাহরণ: একজন উদ্যোক্তা ব্যবসা শুরু করার আগেই জানেন, তার লক্ষ্য কেবল লাভ নয়, বরং একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড তৈরি করা।
অভ্যাস ৩: Put First Things First – অগ্রাধিকার ঠিক করুন
অনেক সময় আমরা জরুরি নয় এমন কাজে ব্যস্ত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে রাখি।
কিন্তু সফল ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার ঠিক করতে জানেন।
তারা কাজের তালিকা বানান এবং সেই তালিকায় সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজকে সবার আগে সম্পন্ন করেন। এতে সময় ব্যবস্থাপনা হয় সহজ, আর ফলাফল হয় কার্যকর।
অভ্যাস ৪: Think Win-Win – সবার জন্য সুবিধা খুঁজুন
সফল মানুষরা জানেন, বড় লক্ষ্য অর্জন সম্ভব কেবল সহযোগিতার মাধ্যমে।
তারা এমন সমাধান খোঁজেন যাতে সব পক্ষই লাভবান হয়।
উদাহরণ: ব্যবসায়িক আলোচনায় তারা শুধু নিজের লাভ নয়, বরং অপর পক্ষেরও সুবিধা নিশ্চিত করেন।
অভ্যাস ৫: Seek First to Understand, Then to Be Understood – আগে শুনুন, পরে বলুন
আমরা অনেকেই কথা বলার জন্য প্রস্তুত থাকি, কিন্তু শোনার জন্য নয়।
সফল ব্যক্তিরা উল্টোটা করেন—তারা প্রথমে মনোযোগ দিয়ে শোনেন, তারপর নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন।
এ অভ্যাস তাদেরকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তোলে এবং যোগাযোগকে করে শক্তিশালী।
যেভাবে খুব সহজেই খারাপ অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করবেন
অভ্যাস ৬: Synergize – দলগত শক্তিকে কাজে লাগান
একসাথে কাজ করার শক্তি এককভাবে কাজ করার চেয়ে বহুগুণ বেশি।
সিনার্জির মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা ও চিন্তাধারার মিলনে তৈরি হয় নতুন সমাধান, নতুন ধারণা।
এখানে “১+১=২” নয়, বরং “১+১=১১” হতে পারে।
অভ্যাস ৭: Sharpen the Saw – নিজেকে পুনরায় চার্জ করুন
অবিরাম কাজ করতে গিয়ে আমরা প্রায়ই নিজেকে যত্ন নিতে ভুলে যাই।
কিন্তু সফল ব্যক্তিরা জানেন, সুস্থ শরীর, প্রখর মন এবং ইতিবাচক মনোভাব ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়।
তারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, নতুন কিছু শিখেন, মেডিটেশন করেন এবং আধ্যাত্মিকভাবে নিজেদের গড়ে তোলেন।
ঠিক যেন করাতকে বারবার ধার দিতে হয়, না হলে সেটি কাজ করবে না।
উপসংহার
সাফল্য হঠাৎ করে আসে না, আসে ধাপে ধাপে অভ্যাসের মাধ্যমে।
Stephen R. Covey দেখিয়েছেন, এই সাতটি অভ্যাস কেবল কর্মক্ষেত্র নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও সমানভাবে কার্যকর।
- প্রোঅ্যাকটিভ হওয়া,
- লক্ষ্য মাথায় রেখে এগোনো,
- অগ্রাধিকার ঠিক করা,
- সবার জন্য সুবিধা খোঁজা,
- আগে শোনা,
- দলগত শক্তি কাজে লাগানো,
- আর নিয়মিত নিজেকে শান দেওয়া
এই অভ্যাসগুলোই একজন সাধারণ মানুষকে করে তুলতে পারে অসাধারণ।




