ভাবুন তো, ঢাকার তীব্র যানজটে বসে আছেন, সামনে গাড়ির সারি, পেছনেও একই অবস্থা। হঠাৎ, মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেলো একটি গাড়ি—রাস্তার যানজটকে উপেক্ষা করে মুহূর্তেই গন্তব্যে পৌঁছে গেল! এক সময় যা ছিল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, আজ তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। এই স্বপ্নকে বাস্তব করেছে প্রযুক্তি, আর নিরলস পরিশ্রম করে চলেছে বেশ কিছু গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।
উড়ন্ত গাড়ির ভাবনার সূচনা
উড়ন্ত গাড়ির ধারণা আজকের নয়। ১৯৩১ সালে আমেরিকান বিমান চালক অ্যামিলিয়া ইয়ারহার্ট প্রথম এমন কল্পনা প্রকাশ করেন। পরে ১৯৩৪ সালের *It Happened One Night* সিনেমায় দেখা যায় উড়ন্ত গাড়ির দৃশ্য। এরপর জেমস বন্ডের বিখ্যাত ১৯৬৭ সালের *You Only Live Twice* মুভিতে ‘লিটল নেলি’ নামের উড়ন্ত গাড়ি দর্শকদের মুগ্ধ করে।
কম্পিউটার আবিষ্কারের ইতিহাস: প্রাচীন অ্যাবাকাস থেকে আধুনিক মাইক্রোপ্রসেসর
পিএএল-ভি লিবার্টি: বাস্তবের প্রথম উড়ন্ত গাড়ি
নেদারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান *PAL-V* (Personal Air and Land Vehicle) এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়। তাদের তৈরি উড়ন্ত গাড়ি *PAL-V Liberty* ২০১৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় *Miami Art Week*-এ প্রদর্শিত হয়।
২০০৯ সালে প্রোটোটাইপ X1 দিয়ে রাস্তায় পরীক্ষা শুরু হয়। সফলতার পর আসে X2 (*PAL-V One*), যা ২০১২ সালে প্রথম আকাশে উড়ে। ২০১৭ সালে কোম্পানি বাণিজ্যিক সংস্করণ *PAL-V Liberty* উন্মোচন করে, যা ২০১৮ সালে জেনেভা মোটর শোতে প্রদর্শিত হয়।
PAL-V Liberty দুটি সংস্করণে পাওয়া যায়।*Liberty Sport* ও *Liberty Pioneer*। প্রিমিয়াম পাইওনিয়ার সংস্করণ আগে ডেলিভারি দেওয়া হয়, পরে স্পোর্ট এডিশনের শিপিং শুরু হয়।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল: স্তর, গঠন ও আমাদের জীবনে এর গুরুত্ব
নকশা ও বৈশিষ্ট্য
PAL-V Liberty দেখতে ছোট বিমানের মতো, ভাঁজযোগ্য পাখা ও প্রোপেলারসহ। এটি চালককে রাস্তার গাড়ির মতো চালানোর সুযোগ দেয়, আবার চাইলে আকাশে উড়ে যেতে পারে। তবে উড্ডয়নের জন্য অন্তত ৯০ মিটার রানওয়ে দরকার।
মূল বৈশিষ্ট্য:
* যাত্রী ধারণ ক্ষমতা: ২ জন
* সর্বোচ্চ টেক অফ ওজন: ৯১০ কেজি
* জ্বালানির ধরন: Euro 95, Euro 98, E10
* সর্বোচ্চ ড্রাইভ গতি: ১৭০ কিমি/ঘণ্টা
* ফ্লাইট গতি: সর্বোচ্চ ১৮০ কিমি/ঘণ্টা
* উড্ডয়ন রেঞ্জ: ৪০০ কিমি
* বডি ম্যাটেরিয়াল: কার্বন ফাইবার, অ্যালুমিনিয়াম, টাইটেনিয়াম
গাড়িটি পেট্রোলে চলে, ফলে জ্বালানির সরবরাহে সমস্যা হয় না। প্রয়োজনে মাত্র ১০ মিনিটে ফ্লাইট মোড থেকে আবার ড্রাইভ মোডে ফিরে আসতে পারে।
PAL-V Liberty চালাতে হলে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পাশাপাশি পাইলট লাইসেন্সও প্রয়োজন। নিরাপত্তার জন্য এতে উন্নত সেফটি ফিচার, মজবুত কাঠামো ও নির্ভরযোগ্য ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়েছে। এটি মাটি থেকে ১২,৫০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে পারে। বিমানবন্দর ছাড়াও উপযুক্ত রানওয়ে বা ফাঁকা মাঠে অবতরণ করা সম্ভব।

গাড়িটির দাম প্রায় ৫,৯৯,০০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫ কোটি ৮ লাখ টাকা)। ইতিমধ্যে ৭০টির বেশি প্রি-অর্ডার পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও দাম বর্তমানে বেশি, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও প্রতিযোগিতার ফলে ভবিষ্যতে এটি অনেকের হাতের নাগালে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উড়ন্ত গাড়ি সাধারণ মানুষের জীবনে এলে যানজটের সমস্যার সমাধান হবে অনেকটাই। হয়তো খুব শিগগিরই আপনি-আমিও গাড়ি চালিয়ে সরাসরি আকাশপথে গন্তব্যে পৌঁছে যাবো—যেন স্বপ্নের যাত্রা বাস্তব রূপ পাবে।
—




