Tuesday, September 16, 2025
Google search engine
Homeআন্তর্জাতিকবিশ্বের ক্ষুদ্রতম ১০টি দেশ: আয়তনে ছোট, বিস্ময়ে অসাধারণ

বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ১০টি দেশ: আয়তনে ছোট, বিস্ময়ে অসাধারণ

বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান খুঁজতে ছোটবেলায় অনেকেরই কষ্ট হতো। দেশের ক্ষুদ্র আয়তন নিয়ে আফসোসও করত অনেকে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো—বাংলাদেশের চেয়েও আয়তনে ছোট অনেক দেশ রয়েছে পৃথিবীতে। এর মধ্যে কোনো কোনো দেশের আয়তন ঢাকা শহরের থেকেও কম! আজ জানব বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ১০টি দেশ সম্পর্কে।

১০. মাল্টা (৩১৬ বর্গকিলোমিটার)

ভূমধ্যসাগরের মাঝখানে সাতটি দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত মাল্টা আয়তনে ঢাকা শহরের চেয়ে সামান্য বড়। জনসংখ্যা মাত্র ৪.৪ লাখ হলেও ঘনত্ব বেশ বেশি। ফিনিশীয়, রোমান, ফরাসি ও ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাস আছে এ দেশে। ১৯৬৪ সালে স্বাধীনতা লাভ করে মাল্টা।

আজকের মাল্টা পর্যটনের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। প্রাগৈতিহাসিক স্থাপনা ও মনোমুগ্ধকর সৈকতের জন্য প্রতিবছর প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ ভ্রমণে আসে এখানে।

৯. মালদ্বীপ (২৯৮ বর্গকিলোমিটার)

ভারত মহাসাগরের এ দ্বীপ রাষ্ট্র বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মুসলিম দেশ। প্রায় ১১০০ দ্বীপ নিয়ে গঠিত হলেও জনবসতি আছে মাত্র ২০০টির মতো দ্বীপে। ১৯৬৫ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায় মালদ্বীপ।

পর্যটন খাত দেশটির প্রধান আয়ের উৎস। সাদা বালির সমুদ্রসৈকত, প্রবাল প্রাচীর ও নীলাভ স্বচ্ছ জল পর্যটকদের টানে। তবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র দেড় মিটার উঁচু হওয়ায় দেশটির অস্তিত্ব এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে।

৮. সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস (২৬১ বর্গকিলোমিটার)

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের এই ছোট্ট দেশটি গঠিত দুটি দ্বীপ নিয়ে। ১৭১৩ সালে ব্রিটিশ কলোনি হওয়ার পর ১৯৮৩ সালে স্বাধীনতা লাভ করে।

চিনি উৎপাদন একসময় প্রধান অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি হলেও বর্তমানে পর্যটনই সবচেয়ে বড় ভরসা। সবুজ উপত্যকা, সৈকত ও রেইন ফরেস্ট পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।

৭. মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ (১৮১ বর্গকিলোমিটার)

প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানে অবস্থিত এই দ্বীপপুঞ্জে প্রায় ৬৮ হাজার মানুষের বসতি। ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাধীনতা পায়।

নারিকেল, মৎস্যশিল্প ও বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল দেশটির অর্থনীতি। নীলাভ স্বচ্ছ সাগর, ১৬০ প্রজাতির প্রবাল ও শত শত মাছের প্রজাতি স্কুবা ডাইভিংয়ের স্বর্গরাজ্য করে তুলেছে এই দ্বীপগুলোকে।

৬. লিশটেনস্টাইন (১৬০ বর্গকিলোমিটার)

আল্পস পর্বতমালার কোলে অবস্থিত লিশটেনস্টাইন পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ। পশ্চিমে সুইজারল্যান্ড আর পূর্বে অস্ট্রিয়ার মাঝখানে স্যান্ডউইচ হয়ে থাকা এ দেশটি প্রিন্স দ্বারা শাসিত হলেও গণতান্ত্রিক কাঠামো বিদ্যমান।

ধাতু, সিরামিক ও ডেন্টাল পণ্যের শিল্পের জন্য পরিচিত লিশটেনস্টাইন মাথাপিছু জিডিপিতে শীর্ষে রয়েছে।

৫. স্যান মেরিনো (৬১ বর্গকিলোমিটার)

ইতালির বুকের ভেতরেই জায়গা করে নিয়েছে ইউরোপের প্রাচীনতম প্রজাতন্ত্র স্যান মেরিনো। ৩০১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এ দেশটি আজও স্বাধীন।

এখানে গাড়ির সংখ্যা মানুষের চেয়েও বেশি! পর্যটন, ব্যাংকিং ও টেক্সটাইল দেশটির প্রধান অর্থনীতি।

৪. টুভালু (২৬ বর্গকিলোমিটার)

অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণে প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত টুভালু আগে পরিচিত ছিল এলিস আইল্যান্ড নামে। ব্রিটিশদের শাসন শেষে ১৯৭৮ সালে স্বাধীনতা পায়।

ফুনাফুটি রাজধানীর চারপাশে বড় একটি লাগুন ঘিরে গড়ে উঠেছে শহর। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এ দ্বীপ রাষ্ট্র।

৩. নাউরু (২১ বর্গকিলোমিটার)

পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম দ্বীপরাষ্ট্র নাউরু জনসংখ্যার দিক থেকেও দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম। মাত্র ১০ হাজার মানুষের বাস এখানে।

একসময় ফসফেট উত্তোলনই ছিল প্রধান অর্থনীতি, তবে এখন নারিকেলজাত পণ্য ও অফশোর ব্যাংকিং আয়ের উৎস।

২. মোনাকো (বর্গকিলোমিটার)

ফ্রান্সের দক্ষিণে ভূমধ্যসাগরের ধারে অবস্থিত মোনাকো ধনীদের দেশ নামে পরিচিত। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশও এটি।

মন্টে কার্লো ক্যাসিনো আর ফর্মুলা ওয়ান রেস মোনাকোকে করে তুলেছে বিশ্বখ্যাত।

১. ভ্যাটিকান সিটি (০.৪৪ বর্গকিলোমিটার)

বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশ ভ্যাটিকান সিটি ইতালির রোম শহরের ভেতরে অবস্থিত। মাত্র কয়েকশ মানুষের বাস এখানে, যার মধ্যে আছেন খ্রিস্টান ধর্মগুরু পোপ।

খ্রিস্টান ধর্মের কেন্দ্রভূমি হিসেবে ভ্যাটিকান বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ভক্তের কাছে পবিত্র স্থান। প্রতিবছর প্রায় চার মিলিয়ন পর্যটক ঘুরতে আসেন এখানে। সেন্ট পিটার ব্যাসিলিকা, ভ্যাটিকান মিউজিয়াম ও সিস্টিন চ্যাপেল এর প্রধান আকর্ষণ।

 পৃথিবী সত্যিই বৈচিত্র্যময়। বড় বড় মহাদেশের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশগুলোও ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। ছোট হলেও তারা বিশ্ব মানচিত্রে এক অনন্য বিস্ময়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular