Tuesday, September 16, 2025
Google search engine
Homeবিনোদনফুটবল খেলার ইতিহাস

ফুটবল খেলার ইতিহাস

ফুটবল—এমন একটি খেলা, যার নাম শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। আজকের দিনে এটি শুধু একটি খেলা নয়, বরং এক বিশ্বজনীন ভাষা। কোটি কোটি মানুষকে একসাথে আনন্দ, উত্তেজনা আর আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যায় এই ৯০ মিনিটের খেলা। তবে ফুটবল এমনভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস ও নানা বিতর্ক।

 ফুটবলের শুরুর কাহিনী

বেশিরভাগ ঐতিহাসিক মনে করেন, ফুটবলের জন্ম চীনে। প্রাচীন চীনারা বল লাথি দিয়ে এক ধরনের  খেলা খেলতো,   যার নাম ছিল কুজু (Cuju)। এখানে খেলোয়াড়েরা শরীরের যেকোনো অংশ ব্যবহার করতে পারতো, শুধু হাত বাদে। আর তাদের উদ্দেশ্য ছিল আধুনিক ফুটবলের মতোই বলকে জালে পাঠানো। তবে এখানেই শেষ নয়। কেউ কেউ বলেন, ফুটবলের শেকড় খুঁজে পাওয়া যায় গ্রিস, রোম  এমনকি মিশরীয় সভ্যতায়। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০ সালের দিকে গ্রিক ও রোমানরা বল নিয়ে খেলত, যেটি অনেকটা রাগবির মতো ছিল। তখন চামড়ার বলের ভেতর বাতাস ভরে খেলা হতো। উত্তর আমেরিকা, জাপানসহ পৃথিবীর আরও অনেক অঞ্চলে একই ধরনের বল-ভিত্তিক খেলা চালু ছিল। তবে ফিফার মতে, আধুনিক ফুটবলকে প্রাচীন এই খেলার সাথে সরাসরি যুক্ত করা যায় না। অর্থাৎ, ফুটবলের  কোনো একক জন্মস্থান নেই, বরং বিভিন্ন সংস্কৃতির খেলাধুলা মিশে এটি গড়ে উঠেছে।

ইংল্যান্ডে ফুটবলের রূপান্তর

আমরা সবাই জানি, আধুনিক ফুটবলের জনক ইংল্যান্ড। তবে এর শুরুটা মোটেও সুন্দর ছিল না। ১০৬৬ সালের দিকে ইংল্যান্ডে খেলাটি জনপ্রিয় হলেও তখন কোনো নিয়ম-কানুন ছিল না। খেলোয়াড়রা দুই দলে ভাগ হয়ে যেত, কিন্তু নিয়ন্ত্রণের অভাবে খেলা রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হতো। মানুষ খেলার নামে একে অপরকে মারধর করতো, অনেকে গুরুতর আহত হতো, এমনকি মৃত্যুও ঘটত। অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল যে রাজপ্রাসাদ থেকেও ফুটবল খেলা বন্ধ করার নির্দেশ জারি হয়েছিল। তবুও মানুষ ফুটবল ছাড়তে পারেনি। খেলায় ছিল এমন এক অদ্ভুত আকর্ষণ।

নিয়মের জন্ম

১৯ শতকে এসে ছবিটা বদলাতে শুরু করে। ইংল্যান্ডের এক শিক্ষক ‘রিচার্ড মুলকাস্টার’ ইতালিতে শৃঙ্খলাবদ্ধ ফুটবল খেলা দেখে দেশে ফিরে সেটি চালু করার উদ্যোগ নেন। তখন ধীরে ধীরে ফুটবলে আসে নিয়মের সংযোজন। তবে তখনও অগোছালো অবস্থা ছিল। কোনো দলে ১০ জন খেলোয়াড় থাকত, আবার অন্য দলে ১৫ জন। গোলরক্ষকও থাকতো একসাথে ৪–৫ জন! মাঠে এত ভিড় হত যে খেলা প্রায়ই হট্টগোলে পরিণত হতো। শেষমেশ ১৮৭০ সালের দিকে সিদ্ধান্ত হয় প্রতিটি দলে থাকবে  ১১ জন খেলোয়াড এবং মাত্র একজন গোলরক্ষক। সেখান থেকেই শুরু হয় আধুনিক ফুটবলের যাত্রা।

১৮৭৫ সালে গোলপোস্টের ওপর প্রথমবার ক্রসবার ব্যবহার হয়। ১৮৭৭ সালে খেলার সময় নির্ধারণ করা হয় ৯০ মিনিট। ১৮৯০ সালে গোলপোস্টে যুক্ত হয় জাল, আর ১৮৯১ সালে চালু হয় পেনাল্টি কিক।

 বিশ্বমঞ্চে ফুটবল

২০ শতকের শুরুতে ফুটবল বিশ্বজোড়া খেলার মর্যাদা পেতে থাকে। ১৯০০ সালে অলিম্পিকে প্রদর্শনী খেলা হিসেবে প্রথমবার ফুটবল অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় FIFA (Fédération Internationale de Football Association)। ১৯০৮ সালে অলিম্পিকে আনুষ্ঠানিকভাবে খেলা শুরু হয়। এরপর ১৯৩০ সালে শুরু হয় ফিফা বিশ্বকাপ, যেটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর। ধাপে ধাপে ফুটবল অলিম্পিক, এশিয়ান গেমসসহ নানা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়।

আজকের ফুটবল

আজ ফুটবল শুধু খেলা নয়, বরং এক শিল্প, এক আবেগ, এক বৈশ্বিক ঐক্যের প্রতীক। বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বা ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি—এসব নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে কোটি মানুষের ভালোবাসা।

উপসংহার

ফুটবলের ইতিহাস শুরু হয়েছিল কোনো এক অগোছালো খেলা থেকে, যেখানে নিয়ম-কানুন প্রায় ছিল না বললেই চলে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষের ভালোবাসা আর শৃঙ্খলার ছোঁয়ায় খেলা আজ পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হয়ে উঠেছে।

ফুটবল মানুষকে শুধু আনন্দ দেয় না, এটি মানুষকে একত্রিত করে, একই আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সত্যিই, এ খেলার মতো সারাবিশ্বকে এক সুতোয় বাঁধতে সক্ষম আর কোনো খেলা নেই।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular