Sunday, November 2, 2025
Google search engine
Homeআন্তর্জাতিকপ্রযুক্তিতে সবচেয়ে উন্নত বিশ্বের ৭টি শহর – ২০২৫ সালের সর্বশেষ তালিকা

প্রযুক্তিতে সবচেয়ে উন্নত বিশ্বের ৭টি শহর – ২০২৫ সালের সর্বশেষ তালিকা

আঠারো শতক থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত যেসব দেশ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছিল, তারাই ছিল বিশ্বের ক্ষমতার কেন্দ্রে। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে বদলে গেছে সেই নিয়ম। এখন ক্ষমতা তাদের হাতেই আছে, যারা তথ্যপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে সবচেয়ে এগিয়ে। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা—সব মিলিয়ে প্রযুক্তিই আজকের সভ্যতার চালিকাশক্তি।

চলুন জেনে নিই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রযুক্তি-অগ্রসর ৭টি শহরের গল্প, যারা বদলে দিচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ।

১।সিলিকন ভ্যালি, যুক্তরাষ্ট্র – প্রযুক্তির বিশ্বরাজধানী

ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকো ও স্যান হোসের মাঝখানে অবস্থিত সিলিকন ভ্যালি পৃথিবীর প্রযুক্তির মক্কা হিসেবে পরিচিত। মাত্র ৩০০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে এখানে রয়েছে হাজার হাজার উচ্চপ্রযুক্তি কোম্পানি।

গুগল, ফেসবুক, অ্যাপল, অ্যাডোবি, ইয়াহু—এসব বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এখান থেকেই উদ্ভাবন ছড়াচ্ছে।

২০০০ সালে এখানকার টেক কোম্পানিগুলো প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করেছে, যা আজ আরও কয়েকগুণ বেড়েছে। নতুন প্রযুক্তি, স্টার্টআপ সংস্কৃতি এবং উদ্ভাবনী গবেষণার জন্য সিলিকন ভ্যালি আজও শীর্ষে।

২। টরন্টো, কানাডা – নিরাপদ ও উদ্ভাবনী টেক হাব

টরন্টো শুধু কানাডার অর্থনৈতিক রাজধানী নয়, বরং উত্তর আমেরিকার অন্যতম বড় টেক ইন্ডাস্ট্রি কেন্দ্র। কানাডার প্রায় ৪০% প্রযুক্তি ব্যবসা এখানেই সংঘটিত হয়।

গুগল, ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন—সব বড় কোম্পানিরই এখানে অফিস রয়েছে।

টরন্টো নিরাপত্তা, জীবনযাত্রার মান ও কর্মসংস্থানের সুযোগে বিশ্বের সেরা শহরগুলোর একটি, যা তরুণ প্রযুক্তিবিদদের জন্য স্বপ্নের গন্তব্য।

৩।সিঙ্গাপুর সিটি, সিঙ্গাপুর – স্মার্ট সিটির অগ্রদূত

মাত্র ৪০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহর আজ বিশ্বের অন্যতম স্মার্ট সিটি। এখানকার মেরিনা বে স্যান্ডস ও গার্ডেনস বাই দ্য বে আধুনিক প্রযুক্তির অনন্য উদাহরণ।

সিঙ্গাপুর সরকার স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম চালুর পথে, যা স্বয়ংক্রিয় গাড়ি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করবে। অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও নগর ব্যবস্থাপনায় এর উন্নতি একে অন্যান্য শহরের চেয়ে অনেক এগিয়ে রেখেছে।

৪।টোকিও, জাপান – রোবট ও উদ্ভাবনের রাজধানী

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে এসে টোকিও আজ বিশ্বের অন্যতম উন্নত শহর। এখানে রয়েছে *নি, প্যানাসনিক, নিকন-এর মতো বিশ্ববিখ্যাত প্রযুক্তি কোম্পানির সদর দপ্তর।

টোকিও রোবোটিক্স, ইলেকট্রনিক্স ও অটোমেশন প্রযুক্তিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ২০২০ সালের অলিম্পিকে রোবট দ্বারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনাই প্রমাণ করে, টোকিও ভবিষ্যতের শহর।

৫। বেঙ্গালুরু, ভারত – ভারতের সিলিকন ভ্যালি

ভারতের প্রযুক্তি শিল্পের প্রাণকেন্দ্র বেঙ্গালুরু, যা দেশের মোট আইটি রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি উৎপাদন করে।

এখানে রয়েছে মাইক্রোসফট, গুগল, উইপ্রো, ইনফোসিস, ইসরো সহ হাজারো কোম্পানির অফিস। সাশ্রয়ী মেধাবী ইঞ্জিনিয়ারের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলো এখানকার কর্মীদের নিয়োগে আগ্রহী।

৬।সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া – বিশ্বের দ্রুততম ইন্টারনেটের শহর

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে রয়েছে ১০,৪৩০টি হাই-স্পিড ওয়াইফাই জোন, যেখানে ইন্টারনেট স্পিড সেকেন্ডে প্রায় ১০০ এমবিপিএস।

স্যামসাং, এলজি, হুন্দাই-কিয়া—এসব ব্র্যান্ড এখান থেকেই বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিতে প্রভাব বিস্তার করছে। অর্থনীতি ও প্রযুক্তি—দুই ক্ষেত্রেই সিউলের অবদান অসাধারণ।

৭।শেনঝেন, চীন – এশিয়ার উদ্ভাবনের শক্তিঘর

চীনের “সিলিকন ভ্যালি” নামে পরিচিত শেনঝেন ২,০০০ বর্গকিলোমিটারের শহর, যেখানে ১ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস।

হুয়াওয়ে, টেনসেন্ট, ডি.জে.আই-এর মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট এখানেই জন্ম নিয়েছে।

শেনঝেন বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র, এবং আগামী দশকে এটি প্রযুক্তির নেতৃত্বে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

 ভবিষ্যতের নেতৃত্বে প্রযুক্তির সম্ভাবনা

আজকের বিশ্বে প্রযুক্তি উন্নয় ও উদ্ভাবন শুধু অর্থনীতির নয়, বরং রাজনৈতিক শক্তিরও অন্যতম ভিত্তি। এই ৭টি শহর কেবল প্রযুক্তির কেন্দ্র নয়, বরং তারা বিশ্বকে নতুন সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

ভবিষ্যতে হয়তো আরও নতুন শহর এই তালিকায় যোগ হবে, কিন্তু আপাতত প্রযুক্তির রাজত্ব করছে এদের হাতেই।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular