Monday, November 3, 2025
Google search engine
Homeবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিপৃথিবীর বায়ুমণ্ডল: স্তর, গঠন ও আমাদের জীবনে এর গুরুত্ব

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল: স্তর, গঠন ও আমাদের জীবনে এর গুরুত্ব

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল: স্তর, গঠন আমাদের জীবনে এর গুরুত্ব

আমাদের চারপাশে রয়েছে এক অদৃশ্য ঢাল—পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল। এটি সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে জীবজগতকে রক্ষা করে। একইসাথে এই বায়ুমণ্ডলই পৃথিবীতে অক্সিজেন, বৃষ্টি, আবহাওয়া ও জলবায়ু নিশ্চিত করে। বিজ্ঞানী টরেসেলি একে তুলনা করেছিলেন “গ্যাসের সমুদ্র” এর সাথে। সত্যিই তো, আমরা যেন বিশাল এক গ্যাসীয় সমুদ্রের তলদেশেই বাস করছি। আজকে আমরা আলোচনা  করব  বায়ুমণ্ডল কী, এর গঠন কেমন, এবং এর পাঁচটি স্তরের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।

বায়ুমণ্ডল কী?

বায়ুমণ্ডল হলো পৃথিবীর চারপাশে ঘিরে থাকা গ্যাসসমূহের স্তর, যা পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে ধরে রাখা হয়। এর ভেতর দিয়েই শ্বাসপ্রশ্বাস, জলীয় বাষ্পের বিনিময়, মেঘ সৃষ্টি, এমনকি আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে।

বায়ুমণ্ডলের উপাদান

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল মূলত গ্যাসের মিশ্রণে গঠিত। এর মধ্যে রয়েছে—

  • নাইট্রোজেন: ৭৮.৯%
  • অক্সিজেন: ২০.৯৫%
  • আর্গন: ০.৯৩%
  • কার্বন ডাইঅক্সাইড: ০.০৩%
  • জলীয় বাষ্প: প্রায় ১%

এই উপাদানগুলোর ভারসাম্যই জীববৈচিত্র্যের টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি।

বায়ুমণ্ডলের স্তরসমূহ

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে সাধারণত পাঁচটি প্রধান স্তরে ভাগ করা হয়। প্রতিটি স্তরের বৈশিষ্ট্য ও কার্যকারিতা আলাদা।

১. ট্রপোমণ্ডল – জীবনের আবাসস্থল

ট্রপোমণ্ডল পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৩–১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। মেরু অঞ্চলে এটি প্রায় ৯ কিলোমিটার এবং বিষুব অঞ্চলে প্রায় ১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত।

এখানে উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষ বাস করে। পৃথিবীর প্রায় ৮০% ভর এই স্তরেই রয়েছে।

আবহাওয়ার পরিবর্তন, বৃষ্টি, ঝড়, মেঘ সবকিছু ঘটে এই স্তরে।

২. স্ট্রাটোমণ্ডল – ওজোন স্তরের প্রহরী

ট্রপোমণ্ডলের ওপরে ১৫ থেকে ৫০–৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত স্ট্রাটোমণ্ডল।

এখানেই রয়েছে ওজোন স্তর, যা সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে।

উচ্চতায় বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।

এর তাপমাত্রা প্রায় ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছায়।

৩. মেসোমণ্ডল – শীতলতম অঞ্চল

স্ট্রাটোমণ্ডলের শেষ সীমানা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত মেসোমণ্ডল পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা স্তর।

এর গড় তাপমাত্রা প্রায় -৮৫ থেকে -১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ কারণে জলীয় বাষ্প জমাট বেঁধে বিশেষ ধরনের বরফমেঘ তৈরি হয়।

৪. তাপমণ্ডল – উত্তপ্ত জগৎ

মেসোমণ্ডলের পর থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই স্তরকে বলা হয় তাপমণ্ডল বা থার্মোস্ফিয়ার।

এখানে সূর্যের কারণে তাপমাত্রা ১,৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে।

এই স্তরের মধ্যেই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS) ভেসে থাকে।

৫. এক্সোমণ্ডল – মহাশূন্যের দ্বারপ্রান্ত

বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ স্তর এক্সোমণ্ডল। এটি প্রায় ৭০০ কিলোমিটার থেকে শুরু হয়ে ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।এখানে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, অক্সিজেনের মতো গ্যাস খুব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে।

এই স্তর ধীরে ধীরে মহাশূন্যের সাথে মিশে যায়।

বায়ুমণ্ডল কেন গুরুত্বপূর্ণ?

১. সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে।

২. প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে।

৩. জলচক্র বা বৃষ্টিপাতের নিয়ন্ত্রণ করে।

৪. আবহাওয়া ও জলবায়ু তৈরি করে পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখে।

উপসংহার

বায়ুমণ্ডল ছাড়া পৃথিবীতে জীবন এক মুহূর্তও টিকে থাকতে পারত না। তাই এটি শুধু বিজ্ঞানচর্চার বিষয় নয়, বরং টিকে থাকার মূল শর্ত। তবে ক্রমবর্ধমান দূষণ, কার্বন নিঃসরণ ও বনভূমি ধ্বংসের কারণে আজ বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য হুমকির মুখে। তাই আমাদের করণীয় হলো প্রকৃতিকে বাঁচানো, যাতে বায়ুমণ্ডল আমাদের সুরক্ষার ঢাল হয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মকেও রক্ষা করতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular