ডেঙ্গু আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বের জন্য এক গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর কয়েক কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ১৯৬৪ সালে, এরপর থেকে এটি প্রতি বছরই বর্ষাকালীন ভয়ঙ্কর এক আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।
কিভাবে বুঝবেন ডেঙ্গু জ্বর?
ডেঙ্গু সাধারণত এডিস মশার কামড়ের ৪–৬ দিনের মধ্যে প্রকাশ পায়। উপসর্গগুলো হলো—
* হঠাৎ উচ্চমাত্রার জ্বর (কখনো ১০৪°F পর্যন্ত, আবার অনেক সময় কম জ্বরও হতে পারে)
* প্রচণ্ড মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা
* শরীরব্যথা, সন্ধি ও হাড়ে ব্যথা
* ত্বকে লালচে র্যাশ বা ঘামাচির মতো দাগ
* বমি বমি ভাব বা বমি
* গুরুতর অবস্থায় নাক, মাড়ি বা শরীরের ভেতর থেকে রক্তপাত, শ্বাসকষ্ট এবং রক্তচাপ কমে যাওয়া
চিকিৎসা বিজ্ঞানে গুরুতর পর্যায়কে **ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF)** বা **ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (DSS)** বলা হয়।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
* শহুরে ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীরা
* ডায়াবেটিস ও অ্যাজমা রোগীরা
* শিশু ও নারী (বিশেষ করে স্কুলগামী বাচ্চারা)
* যারা দিনের বেলা মশারি ব্যবহার করেন না
ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়
ডেঙ্গু প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো মশার বিস্তার রোধ করা।
* বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করুন (ড্রাম, টব, টায়ার, ফ্রিজের ট্রে ইত্যাদি)।
* ঘর ও আশেপাশে আবর্জনা ও অপচনশীল বর্জ্য ফেলে রাখবেন না।
* দিনের বেলায় ঘুমালে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন।
* ঘরে নিয়মিত মশার কয়েল, স্প্রে বা অ্যারোসল ব্যবহার করুন।
* দরজা-জানালায় জালি/নেট লাগিয়ে রাখুন।
* গায়ে পুরো কাপড় (ফুল হাতা ও ফুল প্যান্ট) পরিধান করুন।
* WHO অনুমোদিত **Dengvaxia টিকা** এখন কিছু দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা আংশিক সুরক্ষা দিতে পারে।

ডেঙ্গু চিকিৎসা
ডেঙ্গুর কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। উপসর্গ অনুযায়ী যত্ন নিলে সাধারণত ৫–১০ দিনের মধ্যে রোগী সেরে ওঠেন।
* রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রামে রাখতে হবে।
* প্রচুর পানি, শরবত, ফলের জুস ও ডাবের পানি খাওয়াতে হবে।
* খেতে না পারলে চিকিৎসকের পরামর্শে স্যালাইন দিতে হবে।
* ব্যথা ও জ্বর কমানোর জন্য কেবলমাত্র **প্যারাসিটামল** ব্যবহার করতে হবে।
* **অ্যাসপিরিন, ডাইক্লোফেনাক বা অন্য NSAIDs ওষুধ খাওয়া যাবে না**, কারণ এগুলো রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায়।
* জ্বর বেশি হলে ভেজা তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে তাপমাত্রা কমানো যেতে পারে।
ভুল ধারণা দূর করুন
অনেকেই মনে করেন, একবার ডেঙ্গু হলে আর হয় না। আসলে ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ভিন্ন ধরন আছে। একজন ব্যক্তি জীবনে একাধিকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই বারবার সচেতন থাকা জরুরি।
শেষকথা
ডেঙ্গুর চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখা, পানি জমতে না দেওয়া এবং নিয়মিত মশারি ব্যবহার—এসব অভ্যাস গড়ে তুললেই ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। মনে রাখবেন, সচেতনতা ও সতর্কতাই আমাদের হাতিয়ার।




