স্যালাইন নামটি আমাদের সবারই পরিচিত। ছোট্ট এক প্যাকেট, কিন্তু শরীরের জন্য এটি হতে পারে জীবন রক্ষাকারী। অনেকেই মনে করেন, স্যালাইন মানেই ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতার সময় খেতে হয়। আসলে বিষয়টা এত সীমিত নয়। স্যালাইন শরীরে নানা রকম ভারসাম্য রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আজকের লেখায় জানবো স্যালাইনের আসল কাজ কী, কেবল ডায়রিয়া নয়, আরও কোন কোন পরিস্থিতিতে স্যালাইন খাওয়া জরুরি, এবং ব্যবহারের সময় কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত।
কেন শুধু পানি নয়, স্যালাইন?
প্রশ্ন জাগতেই পারে—ডায়রিয়া হলে ডাক্তার কেন শুধু বেশি পানি খেতে বলেন না, কেন স্যালাইন খেতে বলেন? কারণ খুব সহজ। আমাদের শরীরের পানির পাশাপাশি দরকার *সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড, গ্লুকোজ* সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান। ডায়রিয়ার সময় শুধু পানি নয়, শরীর থেকে এই লবণ ও খনিজ উপাদানও বের হয়ে যায়। পানি খেলে হয়তো তৃষ্ণা মেটে, কিন্তু হারানো খনিজ ফেরে না। আর স্যালাইন ঠিক সেই ঘাটতিই পূরণ করে।
শরীরের *ওসমোরেগুলেশন* বা লবণ–পানির ভারসাম্য বজায় রাখার প্রক্রিয়ায় স্যালাইনের ভূমিকা সবচেয়ে বড়। তবে খাওয়ার সময় অবশ্যই নিয়ম মেনে পানিতে মিশাতে হবে। যেমন, এক প্যাকেট ওআরএস স্যালাইন মিশাতে হবে ঠিক ৫০০ মি.লি. পানিতে। কম পানিতে মিশালে শরীরে অতিরিক্ত লবণ ঢুকে ভারসাম্য নষ্ট হবে, আবার বেশি পানিতে মিশালে কার্যকারিতা হারাবে।
ডায়রিয়া ছাড়াও কখন স্যালাইন খাওয়া দরকার
1. শরীর হঠাৎ দুর্বল হলে
শুধু গ্লুকোজ খেলেই যে শক্তি ফেরে তা নয়, স্যালাইন খেলেও দুর্বলতা দূর হয়। কারণ এতে আছে গ্লুকোজ ও লবণ—দুই-ই, যা দ্রুত এনার্জি জোগায়।
2. লো প্রেশার হলে
হঠাৎ রক্তচাপ নেমে গেলে অনেক সময় শরীর স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। স্যালাইন খেলে রক্তে সোডিয়ামের অভাব পূরণ হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে রক্তচাপ কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
3. তীব্র গরমে কাজ করলে
গরমে বা রোদে বাইরে কাজ করার পর প্রচুর ঘাম ঝরে যায়, সঙ্গে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় লবণ। তখন এক গ্লাস স্যালাইন খেলে শরীর দ্রুত সতেজ হয়।
4. অতিরিক্ত কাজ বা ভ্রমণের পর ক্লান্তি
একটানা কাজ, ভ্রমণ কিংবা ঘুমের অভাবে শরীর দুর্বল বা মাথা ব্যথা করতে পারে। এ সময় এক গ্লাস স্যালাইন দ্রুত স্বস্তি দেয়।
5. খেলাধুলা শেষে
দৌড়ঝাঁপ বা খেলাধুলার পর ঘামের সঙ্গে লবণ বের হয়ে যায়। তাই খেলোয়াড়দের জন্য স্যালাইন কার্যকর একটি পানীয়।
6. পাচনতন্ত্রের যত্নে
অনেক গবেষণায় বলা হয়েছে, স্যালাইন পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে এবং অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক রাখে।
স্যালাইন বানানোর সহজ উপায়
বাজারে প্যাকেটজাত স্যালাইন সবসময় হাতের কাছে নাও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঘরে বসেই বানানো যায় সহজ ফর্মুলায়:
এক লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানিতে ৬ চামচ চিনি, আধা চামচ লবণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হলো হোমমেড স্যালাইন। তবে কখনোই পরিমাপের বাইরে লবণ বা চিনি দেবেন না। এতে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।

স্যালাইন খাওয়ার সময় সতর্কতা
* অযথা বেশি স্যালাইন খাবেন না। শরীরে অতিরিক্ত লবণ জমলে কিডনি বা হৃদপিণ্ডে সমস্যা হতে পারে।
* ডায়রিয়া বা গুরুতর অসুস্থতায় শুধু স্যালাইন নয়, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
* শিশুকে স্যালাইন খাওয়ানোর সময় নির্দিষ্ট পরিমাণে দিতে হবে, বেশি খাওয়ালে বমি হতে পারে।
* খোলা স্যালাইন বেশি সময় রেখে দেবেন না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করতে হবে।
শেষ কথা
স্যালাইনকে আমরা অনেকেই কেবল ডায়রিয়ার ওষুধ ভাবি। কিন্তু বাস্তবে এটি শুধু ডায়রিয়া নয়, শরীরের নানা রকম দুর্বলতা, লো প্রেশার, গরমে পানিশূন্যতা কিংবা দীর্ঘ ভ্রমণের পর ক্লান্তি দূর করতে দারুণ কার্যকর। তবে অবশ্যই খাওয়ার নিয়ম মেনে খেতে হবে, আর গুরুতর অসুস্থতায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাই স্যালাইন সবসময় ঘরে রাখুন, প্রয়োজনে ব্যবহার করুন—এটি হতে পারে সহজ অথচ জীবন বাঁচানো এক সমাধান।




