বিশ্বের দেশগুলোকে আমরা সাধারণত অর্থনৈতিক অবস্থা অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করি—
১. উন্নত দেশ
২. উন্নয়নশীল দেশ
৩. অনুন্নত দেশ
প্রতিটি শ্রেণীর দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ও বৈশিষ্ট্য আলাদা। আজ আমরা জানবো উন্নত দেশের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে, যা তাদের অন্য দেশ থেকে আলাদা করে এবং কেন তারা বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান করছে।
উন্নত দেশ বলতে কী বোঝায়?
উন্নত দেশ হচ্ছে সেইসব দেশ, যারা আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত উৎপাদন পদ্ধতি, দক্ষ মানবসম্পদ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থাকে এক উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তারা শুধু নিজেদের প্রয়োজন মেটাতেই সক্ষম নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও বড় ভূমিকা রাখে।
দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা ১০টি দেশের অর্থনীতি – ২০২৫ সালের হালনাগাদ তথ্য
উন্নত দেশের প্রধান অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য
১. উচ্চ মাথাপিছু আয়
উন্নত দেশের মানুষের গড় আয় অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ—আমেরিকার মাথাপিছু আয় প্রায় ৬৩,০৫১ মার্কিন ডলার, কানাডায় ৪৬,৫১৩ ডলার, সুইজারল্যান্ডে ৬৮,৮২০ পিপিপি ডলার, এবং জার্মানিতে ৫৪,৫৬০ পিপিপি ডলার।
এই উচ্চ আয় তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে এবং ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
২. পর্যাপ্ত মূলধন
আয়ের আধিক্যের কারণে উন্নত দেশের মানুষ সঞ্চয়ে অভ্যস্ত। এই সঞ্চয় থেকে পর্যাপ্ত মূলধন গড়ে ওঠে, যা বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে এবং অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে।
৩. সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার
আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ মানবসম্পদের কারণে উন্নত দেশগুলো তাদের প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদকে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাতে পারে। ফলে উৎপাদন ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায় এবং জাতীয় আয়ের পরিমাণও বাড়ে।
৪. উন্নত শিল্পব্যবস্থা
শিল্পই উন্নত অর্থনীতির প্রাণ। এসব দেশের আয় প্রধানত শিল্প, রপ্তানি, এবং প্রযুক্তিভিত্তিক সেবার উপর নির্ভরশীল। শিল্পোন্নত দেশগুলো বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকে।
৫. নিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি
উন্নত দেশগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রিত থাকে। ফলে মাথাপিছু সম্পদ ও সুযোগ সুবিধা বজায় থাকে—যেমন উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং অবকাঠামো।
উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য
৬. অনুকূল বৈদেশিক বাণিজ্য
উন্নত দেশগুলোর রপ্তানি সাধারণত আমদানির চেয়ে বেশি। তারা আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে শিল্পভিত্তিক পণ্য রপ্তানির দিকে মনোযোগ দেয়। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হয়।
৭. আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা
যদিও উন্নত দেশগুলো শিল্পভিত্তিক, তবুও তারা কৃষি খাতকে অবহেলা করে না। আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনকে কার্যকর ও লাভজনক করে তোলে।
৮. দক্ষ ও উপার্জনক্ষম জনশক্তি
উন্নত দেশের প্রতিটি কর্মক্ষম মানুষ দক্ষ এবং উপার্জনক্ষম। তারা শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে।
৯. উন্নত অবকাঠামো
যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট—সব মিলিয়ে উন্নত দেশের অবকাঠামো তাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে।
উপসংহার
উন্নত দেশের এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদেরকে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে আলাদা করে। দক্ষ মানবসম্পদ, আধুনিক প্রযুক্তি, সঠিক সম্পদ ব্যবহার, এবং স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ—সব মিলিয়ে তারা বিশ্বের অর্থনৈতিক শীর্ষে অবস্থান ধরে রাখে। উন্নয়নশীল দেশগুলো এই মডেল অনুসরণ করলে, দীর্ঘমেয়াদে তারাও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।




