Tuesday, September 16, 2025
Google search engine
Homeবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিইন্টারনেটের আবিষ্কার ও বিকাশের ইতিহাস

ইন্টারনেটের আবিষ্কার ও বিকাশের ইতিহাস

বিজ্ঞানের অন্যতম বিস্ময়কর আবিষ্কার হলো ইন্টারনেট। আধুনিক মানব সভ্যতার বিকাশে এর ভূমিকা অপরিসীম। ইন্টারনেট এমন একটি প্রযুক্তি, যা সময় ও দূরত্বকে কমিয়ে এনে পুরো পৃথিবীকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যা মানুষের জীবনধারা, যোগাযোগ এবং অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে।

ইন্টারনেট কী

ইন্টারনেট হলো ইন্টারকানেক্টেড নেটওয়ার্ক বা অন্তর্জাল। এটি বিশ্বব্যাপী অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশাল যোগাযোগ ব্যবস্থা। সরলভাবে বললে, এটি নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে তথ্য, বার্তা ও সেবা দ্রুততম সময়ে আদান-প্রদান করা সম্ভব।

ইন্টারনেট আবিষ্কারের প্রাথমিক ধাপ

১৯৫০ সালে লিওনার্ড ক্লেইনরক ক্যালিফোর্নিয়ার UCLA থেকে স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে একটি বার্তা পাঠান। এটি ছিল ইন্টারনেটের প্রথম সফল তথ্য প্রেরণ। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে MIT এর জেসিআর লিকলাইডার গ্যালাকটিক নেটওয়ার্ক ধারণা দেন, যেখানে বিভিন্ন কম্পিউটারের মধ্যে প্রোগ্রাম ও তথ্য আদান-প্রদানের ধারণা উপস্থাপন করা হয়।

১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের গবেষণা প্রকল্প অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি (ARPA) প্রথমবারের মতো সামরিক যোগাযোগের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে। তখন চারটি কম্পিউটারকে সংযুক্ত করে নেটওয়ার্ক চালু করা হয়, যার নাম ছিল ARPANET।

প্যাকেট সুইচিং ও TCP/IP প্রোটোকল

ষাটের দশকে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে প্যাকেট সুইচিং প্রযুক্তির ধারণা আসে। ১৯৭০ সালে রেমন্ড টমলিনসন প্রথম ই-মেইল সিস্টেম তৈরি করেন এবং ১৯৭২ সালে ই-মেইল ঠিকানায় প্রথমবারের মতো @ চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।

১৯৭৩ সালে রবার্ট কান এবং ভিন্ট সার্ফ TCP/IP প্রোটোকল তৈরি করেন, যা ইন্টারনেটের মূল ভিত্তি। TCP/IP ইন্টারনেটকে একটি সার্বজনীন ভাষা প্রদান করে, যার মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন নেটওয়ার্ক একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করে।

বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণ

১৯৮০-এর দশকে NSFNET চালু হলে ইন্টারনেট গবেষণা থেকে বেরিয়ে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়। এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক এতে যুক্ত হতে থাকে। ১৯৮৩ সালে ডোমেইন নেম সিস্টেম (DNS) চালু হয়, যা IP ঠিকানাকে সহজভাবে মনে রাখার সুযোগ দেয়। উদাহরণস্বরূপ, .com, .org, .gov প্রভৃতি ডোমেইন তখন থেকে ব্যবহৃত হতে থাকে।

১৯৮৯ সালে টিম বার্নার্স-লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (WWW) আবিষ্কার করেন। HTML ও HTTP প্রোটোকলের মাধ্যমে তিনি তথ্যকে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করার সহজ উপায় তৈরি করেন। এর ফলে ইন্টারনেট সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য আরও সহজ ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

নব্বইয়ের দশকে ইন্টারনেট

১৯৯০ সালের দিকে ইন্টারনেট বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার শুরু হয়। ই-মেইল, ওয়েবসাইট, ই-কমার্স, অনলাইন যোগাযোগ এবং সামাজিক যোগাযোগের পথ সুগম হয়। ১৯৯৩ সালে প্রথম ওয়েব ব্রাউজার মোজাইক চালু হয়। ১৯৯৪ সালে জেফ বেজোস অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৯৮ সালে গুগলের সূচনা ঘটে। বাংলাদেশে ইন্টারনেট চালু হয় ১৯৯৬ সালে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আধুনিক ইন্টারনেট

২০০১ সালে চালু হয় উইকিপিডিয়া। ২০০৪ সালে ফেসবুকের আগমনের মধ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নতুন যুগ শুরু হয়। এরপর আসে ইউটিউব, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্ল্যাটফর্ম। ২০১০ সালে ৪জি প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রে চালু হয় এবং বিশ্বব্যাপী মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার দ্রুত বাড়তে থাকে।

বর্তমানে প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, বিনোদন, যোগাযোগসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের অবদান অনস্বীকার্য।

উপসংহার

ইন্টারনেট আজ শুধু একটি প্রযুক্তি নয়, বরং মানব সভ্যতার একটি যুগান্তকারী অর্জন। গবেষণা, তথ্য বিনিময়, বাণিজ্য, বিনোদন, এমনকি মহাকাশ যোগাযোগ পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ৫জি এবং কোয়ান্টাম নেটওয়ার্কের মতো প্রযুক্তি ইন্টারনেটকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করে তুলবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular