Monday, November 3, 2025
Google search engine
Homeঅর্থনীতিঅর্থনীতি: সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

অর্থনীতি: সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

অর্থনীতি (Economics) হলো এমন একটি পরিবর্তনশীল সমাজবিজ্ঞান, যা মানুষের *অসীম চাহিদা* ও **সীমিত সম্পদের* মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক “Oikonomia” থেকে, যার অর্থ *গৃহ পরিচালনা*। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল অর্থনীতিকে গৃহ পরিচালনার বিজ্ঞান হিসেবে দেখেছিলেন, কিন্তু সময়ের সাথে অর্থনীতির ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত হয়েছে—আজ এটি বিশ্বব্যাপী পণ্য ও সেবা উৎপাদন, বণ্টন, বিনিময় ও ভোগের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান।

অর্থনীতির সংজ্ঞা শ্রেণিবিভাগঃ

অর্থনীতির সংজ্ঞা ইতিহাসে ভিন্ন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে—

1. সম্পদের বিজ্ঞান – অ্যাডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো, জন স্টুয়ার্ট মিল প্রমুখ এ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

2. কল্যাণের বিজ্ঞান – আলফ্রেড মার্শাল, ফিশার, পিগু, অ্যারো প্রমুখ এ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

3. প্রাচুর্যের বিজ্ঞান – লিয়নেল রবিন্স প্রস্তাবিত আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি এ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

রবিন্সের মতে, অর্থনীতি হলো “মানুষের অসীম চাহিদা ও বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সীমিত সম্পদের সম্পর্কভিত্তিক মানব আচরণের অধ্যয়ন”।

এ সংজ্ঞায় তিনটি মূল বিষয় রয়েছে। তা হলো-

* অসীম চাহিদা

* সীমিত সম্পদ

* বিকল্প ব্যবহার

অর্থনীতির প্রকারভেদঃ

* ব্যষ্টিক অর্থনীতি (Microeconomics)

* সামষ্টিক অর্থনীতি (Macroeconomics)

* ইতিবাচক ও নেতিবাচক অর্থনীতি

* মেইনস্ট্রিম ও হেটারোডক্স অর্থনীতি

 অর্থনীতির পথপ্রদর্শকঃ

*অ্যাডাম স্মিথ (১৭৭৬) – *Wealth of Nations* গ্রন্থে জাতির সম্পদ ও উৎপাদন-বণ্টন নিয়ে আলোচনা করেন। তার মতে- অর্থনীতি হলো জাতির সম্পদের প্রকৃতি ও তার কারণ অনুসন্ধান।

*আলফ্রেড মার্শাল (১৮৯২) – *Economics of Industry* গ্রন্থে মানুষের দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ব্যাখ্যায়  বলেন- ‘অর্থনীতি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা করে—কিভাবে মানুষ আয় করে আর সেই আয় ব্যয় করে।‘

*লিয়নেল রবিন্স – আধুনিক সংজ্ঞা প্রদানকারী, *Nature and Significance of Economic Science* গ্রন্থের রচয়িতা। তিনি বলেন- ‘অর্থনীতি মানুষের অসীম চাহিদা আর সীমিত সম্পদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে মানব আচরণ বিশ্লেষণ করে’।

অর্থনীতির ইতিহাস: প্রাচীন থেকে আধুনিক

যদিও লেনদেন ও বিনিময়ের ধারণা প্রাচীন সভ্যতা—মেসোপটেমিয়া, ভারত, চীন, গ্রিস, রোম, পারস্য ও আরব—সব জায়গাতেই ছিল, আধুনিক অর্থনীতির সূচনা হয় মাত্র আড়াই শতাব্দী আগে।

 মধ্যযুগ মার্কেন্টাইলিজমঃ

১৬শ শতকে ইউরোপে *মার্কেন্টাইলিজম* তত্ত্ব শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যার মতে—“অর্থ বেশি যার, জয় তার”। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার, ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্ম এবং শিল্প-বাণিজ্যের বিকাশ এই সময়ের বড় পরিবর্তন। তবে কঠোর নীতির কারণে ১৮শ শতকে মার্কেন্টাইলিজমের পতন ঘটে।

শিল্প বিপ্লব আধুনিক অর্থনীতিঃ

মার্কেন্টাইলিজমের ধারাবাহিকতায়  ইউরোপে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়। অ্যাডাম স্মিথের প্রকাশিত গ্রন্থ  (১৭৭৬) অর্থনীতিকে সামাজিক বিজ্ঞান থেকে পৃথক এক শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। উনিশ শতকের শেষের দিকে আলফ্রেড মার্শাল অর্থনীতিকে সংক্ষিপ্ত রূপে “Economics” নামকরণ করেন।

কৃষিভিত্তিক চিন্তা থেকে বিশ্বায়নঃ

১৮শ শতকের কিছু চিন্তাবিদ মনে করতেন, কেবল কৃষিই অধিক মুনাফা আনতে সক্ষম। কিন্তু আধুনিক অর্থনীতি প্রমাণ করেছে—শিল্প, প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও সেবা খাতও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আজ অর্থনীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, আর্থিক বাজার, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও বৈশ্বিক নীতিমালার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

 উপসংহারঃ

অর্থনীতি কেবল সংখ্যার হিসাব নয়, বরং মানুষের জীবনযাত্রা, উন্নয়ন ও কল্যাণের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। ব্যক্তিগত আয়ের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় নীতি—সবকিছুতেই অর্থনীতির প্রভাব অপরিসীম।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular