Tuesday, November 4, 2025
Google search engine
Homeবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিযে অ্যাসিড আমরা অজান্তেই খাই

যে অ্যাসিড আমরা অজান্তেই খাই

আমরা প্রতিদিন যে ফল খাই, তার স্বাদ, টক-মিষ্টি ভাব কিংবা কষাভাব—এসবের পেছনে লুকিয়ে আছে নানা ধরণের প্রাকৃতিক অ্যাসি। যেমন

*সাইট্রিক অ্যাসিড

*ম্যালিক অ্যাসিড বা

*টারটারিক অ্যাসিড। এগুলো শুধু স্বাদ তৈরিতেই নয়, আমাদের শরীরের জন্যও অপরিহার্য।

মজার ব্যাপার হলো, আমরা প্রতিদিন এই অ্যাসিডগুলো খাই—কিন্তু সচেতনভাবে খুব কম মানুষই জানে এদের উপকারিতা, উৎস এবং স্বাস্থ্যগত গুরুত্ব। আজ আমরা জেনে নেবো কোন কোন অ্যাসিড প্রতিদিন আমাদের পেটে যায়, কোথায় এগুলো পাওয়া যায়, এবং কেন এগুলো ছাড়া সুস্থ থাকা কঠিন।

লেবুর টক আর সাইট্রিক অ্যাসিডের অসাধারণ শক্তি

সাইট্রিক অ্যাসিড বললেই প্রথমে মাথায় আসে লেবু ও কমলার নাম। লেবুজাতীয় ফল ছাড়াও স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি, গুজবেরি—সবগুলোতেই সাইট্রিক অ্যাসিড রয়েছে। এর টক এতটাই শক্তিশালী যে খাবার ও পানীয়তে আলাদাভাবে যোগ করেও স্বাদ বাড়ানো হয়।

গরমের দিনে এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত যেমন সতেজ করে তোলে, তেমনি সাইট্রিক অ্যাসিডের উপকারিতা শুধু স্বাদেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি কাপড়ের দাগ তোলার কাজে, প্রসাধনী ও ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। এমনকি আমাদের শরীরের কোষীয় বিপাকে সাইট্রিক অ্যাসিড চক্র (Citric Acid Cycle) জীবনের জন্য অপরিহার্য।

 আপেলের মিষ্টি-টক স্বাদের পেছনে ম্যালিক অ্যাসিডঃ

ম্যালিক অ্যাসিড কী—এই প্রশ্নের উত্তর এক কথায় “আপেলের প্রাণ”। গ্রিক শব্দ ম্যালাম (আপেল) থেকে এর নাম এসেছে। আপেলে এটি প্রচুর পরিমাণে থাকে, তরমুজের মতো মৃদু টক ফলেও এর উপস্থিতি আছে।

ম্যালিক অ্যাসিড শুধু ফলের স্বাদই তৈরি করে না—এটি আচার, লবণ এবং এমনকি ওয়াইন তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। এর সামান্য মিষ্টি-টক স্বাদ খাবারে আলাদা মাত্রা যোগ করে। আর স্বাস্থ্য দিক থেকে এটি কোষীয় রাসায়নিক বিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা আমাদের শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত।

আঙুরের কষাভাব আর টারটারিক অ্যাসিডের গল্পঃ

টারটারিক অ্যাসিডের উৎস বলতে প্রথমেই আসে আঙুর ও তেতুলের নাম। পুরনো ওয়াইনের বোতলের নিচে যে স্ফটিক বা “ওয়াইন ডায়মন্ড” দেখা যায়, সেটি আসলে টারটারিক অ্যাসিডের একটি লবণ—*পটাশিয়াম বাইটারট্রেট*।

টারটারিক অ্যাসিড শুধু স্বাদ তৈরিতেই নয়, রসায়নের ইতিহাসেও গুরুত্বপূর্ণ। ১৮১৫ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী জাঁ-ব্যাপটিস্ট বায়োট দেখিয়েছিলেন, এই লবণ স্ফটিকের আলো ঘোরানোর ক্ষমতা রয়েছে। এই আবিষ্কার *অপটিক্যাল আইসোমার* (Optical Isomer) ধারণা প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রেখেছে।

 আরও কিছু অ্যাসিড, যেগুলো ফলকে করে বিশেষ

সব ফলের প্রধান অ্যাসিড না হলেও, কিছু কম পরিচিত অ্যাসিডও শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ—

*আইসোসাইট্রিক অ্যাসিড – ব্ল্যাকবেরিতে পাওয়া যায়, যা স্বাদ বাড়ায় ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে।

*অক্সালিক অ্যাসিড – বেরিবেরিতে পাওয়া যায়, যা পুষ্টি শোষণে ভূমিকা রাখে।

*কুইনিক অ্যাসিড – খেজুর ও অন্যান্য পামজাতীয় ফলে পাওয়া যায়, যা শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সহায়ক।

প্রতিদিনের খাবারে প্রাকৃতিক অ্যাসিড রাখুন

লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড, আপেলের ম্যালিক অ্যাসিড, আঙুরের টারটারিক অ্যাসিড—এসব শুধু ফলের স্বাদতৈরিই করে না, বরং হজম শক্তি বাড়ানো, বিপাকক্রিয়া সচল রাখা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো—এসব ক্ষেত্রেও অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।

তাই খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ফল রাখুন। এতে যেমন স্বাদের বৈচিত্র্য আসবে, তেমনি শরীরও পাবে এই প্রাকৃতিক জৈব অ্যাসিডের উপকারিতা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular